কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রতিদিন ভাঙছে ডেঙ্গু আক্রান্তের রেকর্ড

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও প্রতিদিন ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শতাধিক রোগী। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর চারিদিকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১৮১ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে সারাদেশে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিলো, ২৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ২৮ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫০ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ জন। আর বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৫৬৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫৭ জন এবং রাজধানীর বাইরে ১১ জন।

চলতি বছরে সারাদেশে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৯২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৫২৬ জন। এছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে চারজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে ঢাকায় জলাধারগুলো মশার অভয়াশ্রম। বাড্ডা-গুলশান লিংক রোডের গুদারাঘাটের লেকের পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য মশা দিনের বেলা পানির উপর আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মশাগুলোই সন্ধ্যার পর আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। মশার উৎপাতে অনেকে এলাকা ছাড়াও হয়েছেন।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চারদিন যাবৎ ভর্তি আছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর এবং শরীর ব্যথা হলে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পরে প্লাটিলেট গণনা ৭০ হাজারের নিচে নামলে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি এখানে ভর্তি হন।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যে কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে সবচেয়ে কম ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে, তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন ২৭ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চিরুনি অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলো। অভিযানের অংশ হিসেবে জনগণকে সচেতন করা ও সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করারও বিধান রাখা হয়েছিলো।

সরেজমিনে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনের পাশে অনেকদিন ধরে জমা হওয়া ময়লা আবর্জনার স্তুপ দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। এ যুদ্ধে জনগণকেও সমানভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

অন্যদিকে মশা নিধনে ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। অথচ দিনদিন মশা বাড়ছে, বৈ কমছে না।

বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এই টাকা কি মশাদের পেটে যাচ্ছে, নাকি সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে? তবে সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে মশা বৃদ্ধি বা কমার কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের জন্য পৃথক হাসপাতাল নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ আরো কয়েকটি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা হবে।

এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. ফাহিম শাকিল আহমেদ বলেন, একজন রোগী জ্বর নিয়ে আসলে প্রথমেই আমরা তার হিস্ট্রি শুনি। তার জ্বরের মাত্রা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে র‌্যাশ, অক্সিজেনের সঠিক মাত্রা ইত্যাদি আছে কিনা দেখি। এরপর রোগীকে রক্তপরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সাধারণত ডেঙ্গু হলে রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় আর করোনা হলে নিউট্রোফিল কাউন্ট বেশি এবং লিম্ফোসাইট কাউন্টটা কম থাকে।

পাঠকের মতামত: