কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: যৌথ সম্মতিতে যা যা হলো

প্রায় তিন বছর পর দিল্লি সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য নির্বাচনের আগের বছরে শেখ হাসিনার এই সফরের গুরুত্ব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির প্রশ্নে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোতে মীমাংসা না হওয়ায় যেহেতু অনেক সমালোচনা রয়েছে, সে কারণে শেখ হাসিনার এবারের সফর তার সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ এই সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখছেন না বলে জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এর মধ্যে রয়েছে-অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জল শক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্যান্য আইটি অ্যাপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

অন্যান্য সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে-ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।

সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাদের মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক ও মানবপাচার মোকাবিলার মতো পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো প্রাধান্য পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ার উভয় দেশের সরকারপ্রধানের সফর অবশ্যই ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। তবে এমন একটি সময়ে এই সফর যখন নির্বাচনী, অর্থনৈতিক বিষয়সহ বিভিন্ন কারণ দৃশ্যমান আলোচ্য বিষয়। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও এ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিকটতম প্রতিবেশী দেশ দুটি সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছে।

৫ সেপ্টেম্বর ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী। আজ ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সফর শেষে দেশে ফিরবেন তিনি। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব প্রদর্শনপূর্বক ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে যৌথ সম্মতিতে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে: অবিচল বন্ধুত্ব, রেল সংযোগ উন্নয়ন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধাক্কার বিষয়ে সমঝোতা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, নদীর পানি-সংক্রান্ত সহযোগিতা, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং সংযোগ বৃদ্ধি, পারস্পরিক লাভজনক দ্বিমুখী বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সমস্যাসহ বেশকিছু বিষয়। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা উভয়দেশের পক্ষ থেকে।

চলমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের মূল্যায়ন, যেমন: টঙ্গী-আখাউড়া লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, ভারতীয় রেলওয়ের স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান।

বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগের উন্নয়নে গৃহীত নতুন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে: কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর রেল পথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন, বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং সিরাজগঞ্জে একটি কন্টেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি।

পাঠকের মতামত: