কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রেমের দৃশ্য’ ধারণই কাল হলো মাদ্রাসা দপ্তরির

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দিদার আলম (২৮) নামে এক মাদ্রাসা দপ্তরি নিহত হয়েছেন। পরিবারের দাবী, নিজ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রেম সংক্রান্ত একটি ঘটনা ভিডিও ধারণই কাল হয়েছে তার। আর সে কারণে শেষাবধি মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজের পর তাকে খুন করা হয়েছে। এঘটনায় মাদ্রাটির ২ ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত দিদারের স্ত্রী খালেদা বেগম ও পিতা মোঃ ইসলাম জানান, যে ভিডিওর কারণে তিনি খুন হয়েছেন সেটি এখন পুলিশের হাতে। তবে পুলিশ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সদস্য জানান, দপ্তরী হাফেজ দিদারুল আলম খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন খোদ এএসপি সার্কেল আনোয়ার হোসেন। তিনি বুধবার সারা দিন মাঠে ছিলেন। খুনের ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয় জিজাসাদের জন্যে। তাদেরকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আটক একজনের নাম হাফেজ ছৈয়দুল আমিন (১৮)। সে পূর্বা আমতলী মাঠের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে। অপরজন হলেন, তানবিরুল ইসলাম আকাশ ( ১৫)। সে একই এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে।

তারা দুজনই সেই চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার ছাত্র। ছৈয়দুল আমিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর আকাশ অষ্টম শ্রেণিতে। আর সে মাদরাসাতেই দপ্তরী দিদার চাকুরী করতো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধীমান বড়ুয়া বলেন, ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ২ ছাত্রকে থানায় আনা হয়। নিহতের পরিবার আসামী করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

লামা সার্কেলের এএসপি সার্কেল আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি নিজেই খুনের ক্লু বের করতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আর এ জন্য ২ জনকে থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন ক্লু পাওয়া গেলে তাদের আসামী করা হবে।

অপরদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ জাহান জানান, তারা আপাতদৃষ্টিতে ৩টি লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথমটি শিক্ষার্থীদের প্রেম ঘঠিত বিষয় দিদার জানতো। যাতে একটি মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়টি দপ্তরীর পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়। আর তৃতীয়টি মাদরাসায় ছাত্রদের সাথে ছাত্রীদের বা শিক্ষিকার সাথে প্রেম ঘটিত কোন ফোনালাপ বিষয়ে দিদার কারো পথের কাটা হলো কি- না। এছাড়া অন্যান্য আর কোন কারণ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে আজকালের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীর বিষয়ে হয়তো অনেক কিছু জানা যাবে বলে ধারণা পুলিশের এই কর্মকর্তার।

এদিকে স্থানীয় খানেকা জামে মসজিদ সংলগ্ন সালামিয়া রহমানিয়া হেফজখানার হাফেজ আবদুচ্চারাম আমানুল্লাহ বলেন, দপ্তরী দিদার খুন হওয়ার ১৫ মিনিট আগে তার মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে এশার নামাজ পড়ে। তিনি আধ ঘন্টা পর খবর পান দিদারের লাশ রাস্তায় পড়ে আছে।

এদিকে দু’একজন গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দিদার যখন এশার নামাজ পড়ছিলো তখন জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া ১ জন মসজিদের গেইটে পায়চারী করছিলো।

নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, এ যুবক নাইক্ষংছড়িস্থ চাকঢালা মহিুউচুন্নাহ দাখিল মাদরাসার খন্ডকালীন দপ্তরী হিসেরে চাকুরী করতো। সে খুব ভালো ছেলে। তার পারিবারিক কোন শক্র নেই।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা আমতলী মাঠ এলাকায় দিদারের লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, কাজ শেষে সন্ধ্যায় মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ফেরার পথে চাকঢালার আমতলী মাঠ এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পথ অবরোধ করে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

পাঠকের মতামত: