কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ

আজ ১৭ মার্চ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় শিশু দিবসও আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুত্ফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উত্স। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে, নোঙর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব এবং সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিল। যার ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙালি জাতিসত্তার। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতিরই নয়, তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির অগ্রনায়ক। তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাঁকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।

জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে জেপি’র বিবৃতি
জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে জেপি নেতৃদ্বয় বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী। আমাদের জাতীয় জীবনে এই মহান লগ্নে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করছি বাঙালির জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে আমরা স্মরণ করছি ১৫ই আগস্ট ঘাতকের আঘাতে শাহাদাত্বরণকারী জাতির পিতার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের এই দিনে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে, মাত্র ৫৫ বছর জীবনের পরিসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙালি জাতির জন্য বাংলাদেশ নামে জাতি রাষ্ট্র। তিনি কেবল এই রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠাই করেননি, বীরের জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন বিশ্ব দরবারে। এজন্যই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য সত্ত্বা। তিনি ছিলেন কারো ভাষায় রাজনীতির কবি, হিমালয়সম ব্যক্তিত্ব আবার কারো ভাষায় শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক। বাঙালি জাতির জীবনে তাই জাতির জনকের জন্মদিনে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দীক্ষা নেওয়ার দিন, বাংলার দুঃখী মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্ত করার শপথ নেওয়ার দিন, আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনীতিতে দীক্ষা নেওয়ার দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বিশ্বাসঘাতক খুনিদের নির্মম বুলেটে তার মহাপ্রাণ ঘটলেও আদর্শ মুজিবের মৃত্যু নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন অপূর্ব সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ও রাজনীতিবিদ। যিনি সমগ্র দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে। তিনি ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী, তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণা দিয়েছিল ও উদ্দীপ্ত করেছিল। এমন একজন রাষ্ট্র নায়ক যার আবেদন দেশ ও কালের গন্ডি পেরিয়েছে। তিনি গণমানুষের এমনি এক নিকটজন ছিলেন, যার উপর জনগণ আস্থা রাখতে পারতো এবং জনগণের উপরও বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল প্রবল। তাই আজ তার জন্মবার্ষিকীতে মুজিব আদর্শে দেশ, জাতি ও সমাজ গড়ার পথে আমরা উদ্দীপ্ত হওয়ার শপথ

গ্রহণ করি। মহান নেতার এই জন্মদিন উপলক্ষে আমরা দেশবাসী জনগণকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা! একই সঙ্গে এই মহান নেতা ও তাঁর শহিদ পরিবারবর্গের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে এবার উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী। এর আগে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন থেকে শুরু হয় মুজিব বর্ষ। যা এবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এদিন ‘টুঙ্গিপাড়া হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল ২টা ৩০ মিনিটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এবারের আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হৃদয়ে পিতৃভূমি’। ঢাকায় আজ সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং সারা দেশের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। আজ একটি শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন। বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ মার্চেও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়ায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সভায় অংশ নেবেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খৃস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ১নং গেট সংলগ্ন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সারাদেশে জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জেপি’র কর্মসূচি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি’র পক্ষ থেকে দুই দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১ম দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টায় জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। বেলা ১১টায় র্যালিসহ ধানমন্ডি ৩২নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়াস্হ জাতির পিতার মাজারে জেপি’র পক্ষ হতে মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। বাদ জোহর বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া। জেপি’র ২য় দিনের কর্মসূচির মধ্যে আগামী ২০ মার্চ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জহুর হোসেন চৌধুরী হলে’ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান এমপি। এছাড়া সভায় বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় পার্টি-জেপি’র সকল শাখা কেন্দ্র অনুরূপ দিবসটি পালন করবে এবং জেপি’র সকল কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক নেতা ও কর্মীদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

পাঠকের মতামত: