কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বন্ধ হয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা

মাহাবুবুর রহমান :::

আগামীকাল ২৫ আগস্ট পূর্ণ হচ্ছে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের ৩ বছর। শুরুর দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছুটা আলাপ আলোচনা হলেও বর্তমানে থমকে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সব ধরনের আলোচনা। মাঝখানে ২ বার সরকারি ভাবে প্রত্যাবাসনের সব আয়োজন হলেও কোন রোহিঙ্গা ফিরে যায়নি নিজ দেশে।

বরং জুড়ে দিয়েছে নতুন শর্ত এতে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এদিকে ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে কেবল অতিষ্ঠ নয় বরং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে স্থানীয়দের। কারণ রোহিঙ্গারাই এখন স্থানীয়দের গুম খুন সহ নানান অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত থাকে একটি সুবিধাভোগী মহল। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামি দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমত অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অন্য ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা অন্যকোন দেশে স্থানান্তর করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন উখিয়া উপজেলা সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে উখিয়া টেকনাফের ১২ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। আগে আসা রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ৩৩ টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যেটা পৃথীবির সর্ব বৃহৎ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ইতি মধ্যে ঘোষণা হয়েছে। আমরা দেখেছিলাম সরকার প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েকটি চুক্তি করেছিল মিয়ানমারের প্রতিনিধি এসেছিল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিয়ানমারে গিয়েছিল প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিল কিন্তু স¤প্রতি কয়েক বছর খানেক ধরে সেই আলোচনাও আর দেখা যাচ্ছেনা। আর রোহিঙ্গাদের কারণে এখন স্থানীয়রা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কারণ তারাই এখন স্থানীয়দের অপহরণ করে গুম খুন করতে দ্বিধা করছেনা। টেকনাফের যুবলীগ নেতা উখিয়ার ব্যবসায়ি সহ অসংখ্য স্থানীয়দের অপহরণ করে হত্যা সহ চাঁদা আদায় করেছে রোহিঙ্গারা কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কিবা ব্যবস্থা নিয়েছে ? বরং সুবিধাভোগী মহলের পৃষ্টপোষকতায় তারা পার পেয়ে গেছে। এখন আমাদের রোহিঙ্গাদের সমীহ করে চলার মত অবস্থা হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। তাই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত ভাসানচর সহ অন্য জেলায় বা তৃতীয় কোন দেশে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার দাবী জানান তিনি। টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবদুল কুদ্দুস বলেন, ২০১৭ সালে যে রোহিঙ্গারা এক কাপড়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছিল সে সব রোহিঙ্গারা এখন বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী এবং ২২ আগস্ট ২ বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও একজনও ফেরত যায়নি বরং তারা নতুন শর্ত দিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে ফেলেছে। আমি যতুটুক জানি বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মুল দাবী হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। আমার মতে এই দাবী ১০০ বছরেও পূর্ণ হবে না।

কারণ রোহিঙ্গারা মায়ানমারে থাকতে এই দাবী পূরণ করতে পারেনি তাহলে কিভাবে বাংলাদেশে বসে এই দাবী করে। আমার মতে এখানে আর্ন্তজাতিক এনজিও গুলোর ষড়যন্ত্র আছে। উখিয়ার শিক্ষক শাহ আলম জানান, প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার চাপে আমরা বিপর্যস্ত। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে অর্থনৈতিক সহ আইনশৃংখলার অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এছাড়া কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে স্থানীয় র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। সব মিলেয়ে আমরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছি। এর মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি একেবারে আলোচনা না থাকা নিয়ে আমরা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমাদের দাবী দ্রæত সকল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হউক। আর প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে দ্রæত রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হউক।

এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না এটা ঠিক না। উচ্চ পর্যায়ে সব সময় এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে তবে স¤প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছুতে স্থবিরতা বিরাজ করছে সে হিসাবে হয়তো প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা বেশি প্রচার পাচ্ছে না। তবে আমরাও চাই দ্রæত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হউক। কারণ কক্সবাজারকে বাঁচাতে হলে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসনের কোন বিকল্প নেই।

পাঠকের মতামত: