কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের দুটি আনন্দের সিরিজে কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন

 

ফেসবুকে পোস্ট করা ছবি বলছে, লম্বা ছুটি পেয়েই মাহমুদউল্লাহ স্ত্রীকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়েছেন। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের মতো তাঁর সতীর্থরাও এখন আছেন পুরোই ছুটির মেজাজে।

ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বাংলাদেশ সফর স্থগিত না করত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই লম্বা বিরতিটা মাহমুদউল্লাহরা পেতেন না। বিরতিটা এখন ভালোই কাজে দিচ্ছে। এতে সতেজ হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ মিলেছে। সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজুর রহমানের প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন। দুজনের সামনে এখন আইপিএল।

খেলোয়াড়েরা ফুরফুরে মেজাজে ছুটি কাটাচ্ছেন। দুটি সফল সিরিজের পর স্বস্তিতে আছেন টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য ও নির্বাচকেরা। গতকাল শনিবার বিকেলে নির্বাচক হাবিবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলার সময় স্বস্তির হাসিটা বেশ টের পাওয়া গেল। বলেই ফেললেন, ‘চার মাস আগেও টি-টোয়েন্টিতে আমাদের অবস্থান যেখানে ছিল (১০), এখন যেখানে এসেছি (ছয়ে), সে হিসেব করলে একটু তো স্বস্তি লাগছেই। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি।’

তলানি থেকে টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের এই বড় লাফের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দেশের মাঠে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের সাতটিই জয়। আর পুরস্কার হিসেবে এসেছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আর এর প্রতিফলন ঘটেছে র‍্যাঙ্কিংয়ে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের তলানি (টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে) থেকে সাঁ করে উঠে এসেছে মাঝামাঝি অবস্থানে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এতগুলো সুখবর যে দলকে ঘিরে, তাদের এখন স্বস্তিতে না থাকার কারণ নেই। গত তিনটি সিরিজ জেতার পর দলের ভাবনা কতটা বদলে গেছে, হাবিবুল সেটিই বলছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচ যখন খেলতে নেমেছি, তখন আমাদের প্রত্যাশা ছিল কী? চেষ্টা করব জিততে। কিন্তু ওই সিরিজের পঞ্চম ম্যাচের আগে আর হারার চিন্তা ছিল না। তখন ভেবেছি ৪-১ হবে কি না। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে সবাই ভেবেছে সিরিজের ফল ৫-০ হবে নাকি ৪-১! তখন কিন্তু ম্যাচ জেতা কিংবা সিরিজ জেতা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। এটাকে বলে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস দলের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যে যেটাই বলুক, এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।’

ধারাবাহিক ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যে ‘আত্মবিশ্বাস’ নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে চাচ্ছে সেটি নিয়েই আরও অনেকের মতো প্রশ্ন নাজমুল আবেদীন ফাহিমেরও। ক্রিকেট বিশ্লেষক ও বিকেএসপির এই ক্রিকেট উপদেষ্টা মনে করেন, রাতারাতি র‍্যাঙ্কিংয়ের উচ্চ লাফ কখনো হিতে বিপরীত হতে পারে, ‘এভাবে যত দ্রুত ওপরে ওঠা যাবে, তার চেয়ে দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার ভয় থাকে!’

ফাহিমের এই সংশয় তৈরির পেছনে কাজ করেছে বাংলাদেশ দলের জয়ের প্রক্রিয়াটা দেখে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে পছন্দসই উইকেট–কন্ডিশন তৈরি করে। যেটি নগদে সাফল্য এনে দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে-এর বিশ্লেষণ ফাহিম করেছেন এভাবে, ‘ফেয়ার কিংবা স্বাভাবিক কন্ডিশনে যদি খেলা হয় তাহলে মনে হয় আমরা তাদের সঙ্গে পারব না—শুরুর এই ভাবনা ভুল ছিল। তখন কন্ডিশনের সহায়তা নিয়ে জেতার চেষ্টা করেছি। দুটি সিরিজেই আমাদের ব্যাটসম্যানরা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে! এটা ভালো কোনো বিষয় নয়। ব্যাটসম্যানদের দেখলাম ছন্দে ফেরার অনেক চেষ্টা করছে।’

মন্থর ও ঘূর্ণি উইকেটে ব্যাটসম্যানদের যেমন সংগ্রাম করতে হয়েছে, ঠিক বিপরীত ছবি বোলিংয়ে। বাংলাদেশ বেশির ভাগ ম্যাচ জিতেছে বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে। বোলারদের এই সাফল্যেও খুব বেশি স্বস্তি থাকার সুযোগ দেখছেন না ফাহিম। বললেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, সেটা খুব একটা করতে হয়নি। সাকিব-মোস্তাফিজ জানে এটা টি-টোয়েন্টির আদর্শ কন্ডিশন নয়। তবে বাকিদের সমস্যা হতে পারে। নাসুমের (আহমেদ) কথা বলি। নাসুমকে আমরা যেভাবে দেখেছি গত নয়টা ম্যাচে এবং গতকাল (পরশু সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি) যা দেখলাম, আকাশ-পাতাল পার্থক্য। শেষ ম্যাচে সে হয়তো বুঝতে পারল টি-টোয়েন্টি কী।’

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে হারানোর দারুণ সুযোগ, র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকা—এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তি-দুর্বলতার কথা ভেবে পছন্দের উইকেট-কন্ডিশনে টানা দুটি সিরিজ জিতেছে। যদিও এই সাফল্যের মাঝেও বিশ্বকাপের যথার্থ প্রস্তুতি নেওয়া হলো কিনা, সে কথা বারবার আসছে। তবে পাল্টা যুক্তিও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে আছে। বলছেন, ‘কোন দেশ নিজেদের উইকেট-কন্ডিশনের সুবিধা নেয় না?’ অবশ্য নিজেদের কন্ডিশনের ফায়দা নেওয়ার এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে ভারত-ইংল্যান্ডের মতো দল। দেশ-বিদেশে সমানভাবে ভালো করতে এটির বিকল্পও নেই।

নির্বাচক হাবিবুল অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশ ঠিক পথেই আছে, ‘প্রসেস বা প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হতেই পারে। তবে আমাদের কাছে আমরা পরিষ্কার, কী করতে যাচ্ছি, কোথায় যেতে চাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় নিয়ে বেশি চর্চা হলে অনেক সময় দল প্রভাবিত করতে পারে। তবে আমরা যদি নিজেদের কাজ ও লক্ষ্য নিয়ে পরিষ্কার থাকি, তাহলে এটা (নানা আলোচনা–বিতর্ক) উতরে যাওয়া সম্ভব।’

পাঠকের মতামত: