কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশ ‘এমএসএফ’ এর চিকিৎসা এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক চিকিৎসা মানবিক সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স/সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (এমএসএফ) বাংলাদেশে প্রথম চিকিৎসাসেবা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করতে আসার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) এমএসএফ কক্সবাজার এবং উখিয়ার গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দের সাথে এক আলোচনায় বসেন।

আলোচনায় জানানো হয়, ২২শে ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে এমএসএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরপরই, ১৯৭২ সালে এমএসএফ প্রথম বাংলাদেশে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করতে আসে। সেসময় দেশটি মাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী মানবিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসছিল এবং বিধ্বংসী বন্যার কারণে দেশটির মানবিক সহায়তা প্রয়োজনও ছিল। এমন এক সময় সংস্থাটি তৎকালীন চলমান মানবিক প্রচেষ্টায় যোগ দিতে একদল চিকিৎসককে পাঠায় বাংলাদেশে।

এরপর পরবর্তী কয়েক দশক ধরে এমএসএফ সারা দেশে নানা
সংকটে জর্জরিত মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিভিন্ন সময়ে নানা জরুরি স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় একসাথে কাজ করেন।

এমএসএফ কক্সবাজারের রিপ্রেজেন্টেটিভ জসুয়া ইকলেই জানান,
“বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা প্রান্তের দু:স্থ মানুষকে সহায়তা প্রদানের এমএসএফএর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে আজ আমরা উদযাপন করছি।বাংলাদেশে আমাদের কর্মীরা সংকটের পরে এবং রোগের
প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য স্থানীয় জরুরি দলের সাথে পাশাপাশি কাজ করছে।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে উপকূলীয় দুর্গম এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কাজ করেছে এমএসএফ। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে ময়মনসিংহের
ফুলবাড়িয়ায় কালা জ্বরে আক্রান্তদের জন্য একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, এবং ২০১০ সালে রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করি আমরা। ২০১৪ সালে আমরা ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার জন্য বান্দরবান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছিলাম। এছাড়া কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদেরও সেবা দিয়ে যাচ্ছে এমএসএফ।

মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স একটি আন্তর্জাতিক মানবিক চিকিৎসা সংস্থা যা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে ১১টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। আমাদের প্রদান করা চিকিৎসা সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল পরিসেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে জরুরী এবং নিবিড় পরিচর্যা, শিশুরোগ, প্রসূতি এবং যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, যৌন সহিংসতার শিকারদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা, হেপাটাইটিস সি এবং ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মত অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের যত্ন। এছাড়াও এমএসএফ শরণার্থী শিবিরে বর্জ্য এবং মানব সৃষ্ট বর্জ্য পরিশোধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, “২০১৭ মিয়ানমারের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে আমরা আমাদের চিকিৎসা ও মানবিক কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা রোগীদের জন্য উচ্চমানের, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে এমএসএফ”।

‘এমএসএফ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৫০ বছর হয়ে গেছে। যে কোন সংকটে আমাদের কাজ করার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ঘটনার ভয়াবহতা, জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসুস্থতার মাত্রা এবং মৃত্যুহার, স্বাস্থ্যসেবা থেকে
বাদ পড়া জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তীব্রতা এবং এমএসএফ তাদের জীবনে কি ধরণের প্রভাব আনতে পারে তার উপর।

সারাবিশ্বজুড়েই এমএসএফ এর চিকিৎসা সেবা এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া নির্ভর করে এসব মানদন্ডের ওপর। আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার উর্ধ্বে সকল মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি, যখন
তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এবং সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশে আছি’।

এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এমএসএফ এর হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশন ইমামুর রহমান এবং ড. ওয়াসিম ফিরোজ, প্রোজেক্ট মেডিকেল রেফারেন্ট।

পাঠকের মতামত: