কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষের পথে। কিন্তু শতভাগ গ্রাহক কী সন্তুষ্ট? এই প্রশ্নে দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিদ্যুৎ নিয়ে এখন সরকারের সামনে তিন চ্যালেঞ্জ। প্রথমত-নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, দ্বিতীয়ত-মানসম্মত বিদ্যুৎ ও তিন নম্বর হলো সহনশীল দাম নিশ্চিত করা।

এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। ইতোমধ্যে নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর বেশিরভাগ শহরকেন্দ্রীক। গ্রামকে ঘিরে খুব একটা পরিকল্পনা নেই।

একজন কর্মকর্তা বলেন, যদি বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই, তবে সব লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নিতে হবে। সেটি একদিনে সম্ভব নয়। সারাদেশে সেটি একযোগে করা যাবে না। ঢাকাতেই এখনও বেশিরভাগ বিদ্যুতের লাইন মাটির উপরে। কাজটি করতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে বড় বড় শহরগুলোতে এ কাজ শুরু হয়েছে।

এদিকে উত্তরাঞ্চলে এখনও লোডশেডিং তীব্র। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না বলে অন্য এলাকা থেকে বিদ্যুৎ নিতে হয়। তাই লো-ভোল্টেজের কারণে সেখানকার গ্রাহক মানসম্মত বিদ্যুৎ পায় না বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতেও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে শুধু সাধারণ ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে না, পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়ছে।

এখন দেশে ১১ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে চালানো সম্ভব হয় ৬ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাস সঙ্কটে বাকিগুলো বন্ধ রাখতে হয়। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পেতে সাশ্রয়ী জ্বালানির ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এখন লো-ভোল্টেজ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখন যথেষ্ট জেনারেশন (উৎপাদন) আছে। ফলে যদি লো-ভোল্টেজ হয়, তবে ধরে নিতে হবে, জেনারেশন হচ্ছে না। কিংবা আমাদের এখানে সঞ্চালন ও বিতরণের অবস্থা নাজুক। তিনি বলেন, তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে আমরা খুব দ্রুত কাজ করেছি। এখন ধীরেসুস্থে অন্য কাজগুলোও সারতে হবে। আমি মনে করি উৎপাদনের পরিবর্তে এখন সঞ্চালন ও বিতরণে নজর দিতে হবে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দেওয়াও সরকারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মাথায় রাখতে হবে।

পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বলেন, দেশের কিছু এলাকায় যে সঞ্চালন ব্যবস্থা আছে তা দিয়ে বছরের ৫-৬ মাস পুরোপুরি বিদ্যুৎ দেওয়া যায় না। ময়মনসিংহ ও রংপুর এই সঙ্কটে পড়েছে। কারণ, ওই এলাকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও উৎপাদনে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া কেন্দ্র কয়লার সঙ্কটে চালানো যায় না। এতে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয় এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ নিতে গিয়ে লো-ভোল্টেজের সমস্যা হয়। এ জন্য কয়েকটি প্রকল্পর কাজ চলছে জানিয়ে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এর সমাধানে আরও বছর তিনেক অপেক্ষা করতে হবে।

পাঠকের মতামত: