কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এক হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছে বুধবার

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে আগামীকাল বুধবার নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে আরও এক হাজার রোহিঙ্গা। উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একটি কেন্দ্রে জড়ো করা হচ্ছে।

আজ রাতে রোহিঙ্গাদের নেওয়া হবে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের অস্থায়ী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে। সেখান থেকে বুধবার সকালে বাস ও ট্রাকে তুলে রোহিঙ্গাদের সড়কপথে পাঠানো হবে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের নেওয়া হবে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে।

জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর এটাই ভাসানচরে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম। এর আগে ছয় দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হয় ১৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামছু-দ্দৌজা বলেন, বুধবার সপ্তম দফায় কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু কতজন যাচ্ছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এর আগে ছয় দফায় রোহিঙ্গা স্থানান্তর হয়েছিল ১৮ হাজার ৫০০ জন।

ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানালেন রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এক্সিবিশন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক। তিনি বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক আছে।
ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার ধারণক্ষমতার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়।

উখিয়ার কালুখালী ক্যাম্পের মাঝি নাজির হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘনবসতির কয়েকটি ক্যাম্পের ঝুঁকি কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ভাসানচরে স্থানান্তর হতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ভাসানচর আশ্রয়শিবিরটি কক্সবাজার ক্যাম্পের তুলনায় অনেক নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত, সুযোগ-সুবিধাও বেশি। কিন্তু ভাসানচর থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। তাতে গোপনে পালিয়ে আসা বন্ধ হবে।’

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গারা নৃশংসতার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। এ নিয়ে ১২ অক্টোবর দুপুরে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা জাতিসংঘকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিলও করে। প্রথম আলো

পাঠকের মতামত: