কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল করতে চাই না বরং দলকেন্দ্রিক নেতৃত্ব হবে

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান নুরুল হক নুর। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) পদেও জয় পান তিনি। ছাত্র রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে এখন নামতে যাচ্ছেন জাতীয় রাজনীতিতে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন শিগগিরই। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, নতুন দল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নুরুল হক নুরের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক রাশেদ নিজাম। সঙ্গে ছিলেন সাখাওয়াত ফাহাদ।

আপনার রাজনৈতিক দলের ঘোষণা কবে আসছে?
নুরুল হক নুর: আমরা এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং সেভাবেই এগোচ্ছি।

প্রস্তুতির বিস্তারিত জানতে চাই।
নুরুল হক নুর: গত বছর থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছি, যারা এখনো গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বা কথা বলে। আইনের শাসন নিয়ে যারা সোচ্চার, তাঁদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার কারণেই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত যে চেতনা—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই, তবে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দরকার। গণমানুষের রাজনৈতিক দল দরকার। অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করে একটা পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। তাদের নিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেব। কিছু মানুষ প্রকাশ্যে কাজ করবে, সরাসরি; এবং কিছু মানুষ এখনই সরাসরি যুক্ত হবে না। তাদের মধ্যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ সামরিক কর্মকর্তা, কেউ পুলিশের কর্মকর্তা। যেহেতু সরকারের একটা ঝামেলা আছে, এ কারণে অনেকেই এখন প্রকাশ্যে আসবে না। সরকারি বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন, যারা রিটায়ার্ডের (অবসরের) দ্বারপ্রান্তে আছেন। এই মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের শুরুতেই ঘোষণাটি আমরা দেব।

দলের নাম কী হবে?
নুরুল হক নুর: দুটি নাম নিয়ে আলোচনা আছে। কিন্তু কোনোটাই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। একটি হচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদ। আরেকটি হচ্ছে, বাংলাদেশ অধিকার পার্টি বা বিআরপি। একটা স্লোগান আমাদের তৈরি করা আছে। সেটি হচ্ছে, ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার।’

গত কয়েক বছরে তো অনেকগুলো পার্টি হলো, কেউ সফল হয়নি। আপনারা কেন সফল হবেন?
নুরুল হক নুর: প্রথমত, যেসব পার্টি গঠন হয়েছে, সেগুলো দু-একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে কেউ একজনের একক নিয়ন্ত্রণাধীন পার্টি তৈরি হয়েছিল। অনেকটা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতোই। পরিবার কেন্দ্রিকতার বাইরে তারা বের হতে পারেনি। আমরা একটা গণতান্ত্রিক পার্টি গড়ে তুলতে চাই, যে পার্টিটা একটা প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করবে। নেতৃত্ব নির্বাচন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এখন পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রমে আমরা গণতন্ত্রের চর্চাটা আমরা করছি। কিছুদিন আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের কাউন্সিল হয়েছে। সারা দেশের ভোটারদের একেবারে প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। যুব অধিকার পরিষদের আগামী ২২ অক্টোবর সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। পার্টির গঠনতন্ত্র, কার্যক্রম, নেতৃত্বটা কেমন হবে, কীভাবে হবে—আমাদের এই আলোচনা সবার সঙ্গে হয়ে গেছে। আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল করতে চাই না, বরং দলকেন্দ্রিক নেতৃত্ব হবে। যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাঁরা চাইলে এই পার্টি থেকে কাজ করতে পারবেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মীদের সরাসরি ভূমিকা থাকবে। এগুলো বিদ্যমান কোনো পার্টিতেই নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপির যে কার্যক্রম সেটা তো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরা যে যখন ক্ষমতায় ছিল আইন, আদালত, প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করা, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা—এসব করেছেন। কিন্তু আমাদের একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকবে যে, আমরা কীভাবে রাষ্ট্রটাকে দেখতে চাই এবং আমাদের নেতৃত্ব কীভাবে পরিচালিত হবে। যখন একটা মানুষ দেখবে একটা পার্টিতে দুবারের বেশি কেউ সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারছে না, তখন মানুষের মধ্যে একটি পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে যে, এই পার্টিতে গণতন্ত্র আছে। সুতরাং এই পার্টির দ্বারা দেশও গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হবে।

আর কী কী কারণে অন্যান্য দলের চেয়ে আপনাদের আলাদা মনে হবে? আপনাদের কর্মসূচি কেমন হবে?
নুরুল হক নুর: আমরা মনে করছি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সংস্কারের জন্য কিছু বিষয় সামনে আনা দরকার। যেমন—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন দ্বারা এখনো পুলিশ পরিচালিত হয়। ব্রিটিশ আইন তখন জমিদারি টেকানোর জন্য হয়েছিল, সেই আইনে কেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পুলিশ পরিচালিত হবে? পুলিশসহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে আমাদের কিছু কর্মসূচি থাকবে। জনবান্ধব প্রশাসন করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো দরকার। প্রশাসন সংস্কারের আলাপ আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকবে। সাংবিধানিক কিছু সংস্কার নিয়েও আমাদের প্রস্তাব আছে। আমদের দল ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী পদে কেউ দুবারের বেশি থাকতে পারবে না। সংসদকে কার্যকর করার জন্য আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা ভাবছি। একটা দল ৫২ শতাংশ ভোটে সরকার গঠন করবে, আর ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারবে না—এটা হতে পারে না। এমন কিছু প্রস্তাব আমাদের আছে। সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, সংসদদের আইনপ্রণেতা হিসেবে স্বাধীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। আদালত ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণাপত্র ছিল, সেখানে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্য কৃষক-শ্রমিকের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিষটিও থাকবে। এই বিষয়গুলো আশা করি মানুষকে আমাদের পার্টি সম্পর্কে

পাঠকের মতামত: