কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে ২১২ রোহিঙ্গা’

বাংলাদেশ-ভারত অংশের সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশ প্রবেশ করছে। বিভিন্ন সময় বেশ কিছু রোহিঙ্গা নাগরিক ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

তিনি বলেন, সীমান্তে দালাল চক্রের কার্যক্রমকে কীভাবে প্রতিহত করা যায়, সে বিষয়ে এবার সীমান্ত সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন ভারত সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বা মিয়ানমারের নাগরিকরা বা অন্যান্যরা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা তাদের (বিএসএফকে) সীমান্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।

তারা বিষয়টি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে ৫২তম সীমান্ত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, ৫১ পরিবারের ২১২ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর বাইরে হয়তো দুর্গম পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত দিয়ে যেন কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটাতে পারে। বিএসএফ আশ্বস্ত করেছে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তারা কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা উভয় দেশের সীমান্ত বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করতে চেষ্টা করছি। আমাদের যোগাযোগ, যথাযোগ্য সময়ে তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করা। এতে আমাদের আন্তঃসম্পর্কের উন্নতি করা; ফরমাল ও ইনফরমাল সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী হবার ব্যাপারে আলোচনা করেছি।

সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে বক্তব্য কী ছিল? বিজিবিও কি সীমান্তে নিহত সবাইকে অপরাধী মনে করে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি, কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারি। কমানো নয়, শূন্যের কোঠায় কীভাবে নামিয়ে আনতে পারি।

তিনি বলেন, সীমান্তে একটা হত্যা মানে শুধু একটা মানুষের মৃত্যু নয়, এতে নিহতের পুরো পরিবার ভোগান্তিতে পড়ে। এলাকার মানুষের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে যে পেশাদার সম্পর্ক, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব আমরা বিএসএফকে বুঝিয়েছি। তারাও বুঝেছেন, আমরা সব সমস্যা একীভূত করে কীভাবে তা কমানো নয়, একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়, আমাদের স্পিরিট কাজে লাগিয়ে আমরা আশাবাদী। এটা সম্ভব।

গত ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন। বৃহস্পতিবার যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়।

বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং-এর নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।

অপরদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহবান জানান। তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানব পাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক তাঁকে এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি সীমান্তে বিভিন্ন অপরাধ, মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ ভারতীয় পার্শ্বে অনিষ্পন্ন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

এছাড়াও উভয় পক্ষই সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ এর যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলানিউজ২৪

পাঠকের মতামত: