কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ভাসানচরে শর্ত ভঙ্গ করে ২২ এনজিওর নেটওয়ার্ক

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে এনজিওগুলো বিরোধিতা করে আসছিল বলে এতদিন অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় সম্প্রতি ২২টি এনজিও নোয়াখালীর হাতিয়ার এই দ্বীপে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ শুরু করেছে। তবে এসব সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর আইন ও বিধি-বিধানবহির্ভূত কর্মকাে র অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনজিও ব্যুরো একটি নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ২৯ নভেম্বর ভাসানচরে যান ২২টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শতাধিক কর্মী। সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যান ৬০ টন খাবারও। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে একটি দলকে গত ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। প্রথম দফায় ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসা এই দলে পুরুষ ৩৬৮, নারী ৪৬৪ জন এবং শিশু ৮১০ জন। দ্বিতীয় দফায় গত ২৮ ডিসেম্বর ১৮০৫ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। সরকারের পাশাপাশি ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সেবায় কাজ করছে ২২টি এনজিও। ভাসানচরে কাজের জন্য তাদের অনুমতি দেয় এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। তাদের থাকার জন্যও সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে অবকাঠামো৷

ভাসানচরে কর্মরত এনজিও সংস্থাগুলো হচ্ছে- পালস বাংলাদেশ সোসাইটি, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ (কেএসআর), ফ্রেন্ডশিপ, ছাওয়াব, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গেল্গাবাল উন্নয়ন সেবা সংস্থা, আল-মানহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সনি ইন্টারন্যাশনাল, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, হেল্প দ্য নিডি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জনসেবা কেন্দ্র, কারিতাস বাংলাদেশ, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), সোশ্যাল এইড, সেন্টার ফর হিউম্যানিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি), মুক্তি কক্সবাজার, ভলান্টারি অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টি সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল (এমএসআই), আলল্গামা ফয়জুলল্গাহ ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (এইচএইএফএ)। এসব সংস্থা ‘এনজিও অ্যালায়েন্স অব ভাসানচর’ নামে একটি সম্মিলিত পল্গ্যাটফর্ম গঠন করে। এই পল্গ্যাটফর্মের সমন্বয়কের দায়িত্ব পান পালস বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম। এরপর থেকে সমন্বয়ক পরিচয়ে ভাসানচর ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন।

তবে ভাসানচরে এনজিওদের এই জোট গঠনে আপত্তি জানিয়েছে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। এ ছাড়া ভাসানচরে কর্মরত এনজিগুলো একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে বলেও খবর পেয়েছে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর এনজিও ব্যুরো একটি নির্দেশনা জারি করে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ভাসানচরে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এনজিওসমূহ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলাসহ এনজিও অ্যালায়েন্স অব ভাসানচর নামক একটি অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠী গঠনের তথ্য পাওয়া গেছে। পালস বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিমকে উদ্দেশ করে নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে জানা যায় যে, তিনি এনজিও অ্যালায়েন্স অব ভাসানচর-এর মুখপাত্র হিসেবে মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন। তার এমন কর্মকা এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর নির্ধারিত শর্তাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬-এর পরিপন্থি এবং অনভিপ্রেত।’ নির্দেশনায় এমন কর্মকা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। নির্দেশনার অনুলিপি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, ভাসানচর প্রকল্প পরিচালক, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গা কিংবা ভাসানচর খুব স্পর্শকাতর বিষয়। সেখানে হঠাৎ এনজিগুলো গিয়ে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ কিংবা জোট গঠন করেছে, যেটি শর্তের পরিপন্থি। ফলে আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। তিনি বলেন, সেখানে এনজিওগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় করছে এনজিও ব্যুরো। তারা সেখানে নিবিড় আওতায় আছে। তুলনামূলকভাবে ভাসানচর অন্য জায়গা থেকে দুর্গম, এটি স্বাভাবিক এরিয়া নয়। এ কারণে আমি তাদের বলেছি, খুব তাড়াহুড়া করে আপনারা একটি সমিতি গঠন করবেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন- এ বিষয়টি কাম্য নয়। কোনো জোট কিংবা সংগঠন করতে হলে এনজিও ব্যুরোর অনুমতি লাগবে। অনুমতি ছাড়াই তারা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ও জোট গঠন করেছে।

এ বিষয়ে এনজিও অ্যালায়েন্স অব ভাসানচর-এর সমন্বয়ক ও পালস বাংলাদেশ সোসাইটি কক্সবজার-এর প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম সমকালকে বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট গঠন করিনি। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ কিংবা নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্যে এটা অনানুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরো থেকে আমাদের যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা আমরা মেনে চলব। যদি এটা অন্যদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমরা আর এই জোট কিংবা কোনো সোশ্যাল গ্রুপ করব না। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত: