কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ভাসানচর নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হোক

ভাসানচর নিয়ে হইচই কম হলো না। দেশ-বিদেশে এই ভাসানচর নিয়ে অনেক নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তাদের বলতে শোনা গেছে, এসব শরণার্থীকে আশ্রয়ের নামে মৃত্যুকূপে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে আশ্রিতদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় ওরা বানের জলের সঙ্গে ভেসে যেতে পারে। তাদের এই বড় বড় মুখরোচক কথায় কারো পেট ভরেনি। মন ভরা তো অনেক দূরের কথা। গত তিন বছর আগে এসব শরণার্থী মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। আহার জুগিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে। দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। একই সঙ্গে অনেকে সাহায্য করেছেন তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এজন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

তবে এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তাদের কেউই তেমন একটা সরব হননি। খোদ জাতিসংঘের ভূমিকাও ইতিবাচক হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের কোথায় রাখলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, সে ব্যাপারে সরব হতে দেখা যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভাসানচরে ব্যয় করেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এত টাকা জলে ফেলার জন্য বাংলাদেশ যে এ কাজ করেনি, তা যেকোনো পাগলের বোধগম্য হলেও এ ব্যাপারে কতিপয় রোহিঙ্গা দরদির বোধের দরোজা এখনো বন্ধ রয়েছে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ যখন বেশি হয় তখন বলতেই হয়, ‘এর পেছনে কোনো না কোনো কার্যকারণ রয়েছে’।

কার্যকারণ যাই থাকুক না কেন, প্রতিটি সূর্যোদয়ের সঙ্গে প্রত্যেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর চিন্তা ও চেতনার রং বদল হচ্ছে। একসময় তারা ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণই নেতিবাচক ছিল। এখন আর সে রকম নেই। দ্বিতীয় দফায় যারা গেছে তাদের ভাষায়, আগে যাওয়া স্বজন প্রতিবেশীদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ‘ভালোভাবে থাকার আশায়’ তারাও ভাসানচর এসেছে। আগে চিন্তায় ছিল থাকা-খাওয়া কেমন হবে, সেটা নিয়ে। তাই প্রথমে যেতে চায়নি। কিন্তু সেখানে যাওয়া বউ ও অন্যদের কাছে জেনেছে, সার্বিকভাবে সেখানকার অবস্থা টেকনাফের চেয়ে সবদিক থেকেই উন্নত ও ভালো। তাই দ্বিতীয় দফায় এখানে এসেছে। তাদের মতে, কক্সবাজারের উখিয়ায় এখনো যারা রয়েছে তাদের অনেকেই ভাসানচরে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। দ্রুতই এর প্রবাহ বাড়বে বলে তারা মনে করছে।

এবার দ্বিতীয় দফায় গত মঙ্গলবার নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজে করে ১ হাজার ৮০৪ জনকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আসা এক রোহিঙ্গা পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে এবার তারা এসেছে ভাসানচরে। প্রথম দফায় ভাই, বোন ও শ্যালক এসেছে। তারা জানিয়েছিল, সেখানকার অবস্থা ভালো। তাদের থাকার ঘরও সুন্দর। আগে টেকনাফে বাঁশের ঘর, পলিথিনের ছাউনির মধ্যে মানবিক জীবনযাপন করতে হতো। এখানে এসে তারা তুলনামূলক উন্নত পরিবেশ পেয়েছে। পেয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা শরণার্থীর কল্যাণে বাংলাদেশ যা করেছে এবং করছে, তা বিশ্ব মানচিত্রে একটি বিরল উপমা হয়ে থাকবে। মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ এ দেশের মানুষের জন্য নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতির একটি অংশ। আমাদের মানবিক আচরণকে দুর্বলতা ভেবে অযাচিত উপদেশ না দিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। আমরা চাই, যারা সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চায়, তারা যেন মূল সমস্যা সমাধান প্রশ্নে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজভূমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে আসেন। প্রতিদিনের সংবাদ

পাঠকের মতামত: