কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পৃথিবী!

মনে আছে হলিউডের দ্য ডে আফটার টুমোরো মুভির কথা? যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের স্রোত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একের পর ঘটতে থাকে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ? মুভিটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা কী, সেটা বোঝাতেই তৈরি করা হয়েছিল। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আসলেই সেদিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, এটা কারোই অজানা নয়। জীববৈচিত্র্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যত এর কোনো প্রভাব নেই, তাই জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতার জন্য কত বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, তা নিয়ে কোনো ধারণাই নেই মানুষের। সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়ংকর এক তথ্য। কমে যাচ্ছে পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর স্রোত। মহাসাগরীয় স্রোত হিসেবে পরিচিত এ স্রোতগুলোর গতি কমে যাচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে কমে যাচ্ছে সমুদ্রের স্রোতের গতি। দশকের পর দশক ধরে দুর্বল হচ্ছে সমুদ্রের স্রোত। পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তথ্য বলছে, সমুদ্রের স্রোত কমার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর আর প্রশান্ত মহাসাগরসহ পুরো পৃথিবীর সমুদ্রে আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশনের গভীর স্রোতের মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয়। এই স্রোত উত্তর আটলান্টিকের দিকে দুর্বল হয়ে গেছে।

গবেষকরা বলছেন, দ্য ডে আফটার টুমোরো চলচ্চিত্রের থিম সঠিক। কারণ উত্তর আটলান্টিকের গভীর স্রোতের কারণেই পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রে শক্তিশালী স্রোত তৈরি হয়, বিশেষ করে ইউরোপ, ব্রিটেন আর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপকূলীয় এলাকাতে। পুরো বিশ্বের সমুদ্রের স্রোতে সামঞ্জস্য তৈরি হয়। কিন্তু এই গতি ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে গ্রিনল্যান্ডের বরফখণ্ড গলছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। যা সমুদ্রের গতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। আবার উত্তর আমেরিকায় এ জন্য বাড়ছে বৃষ্টিপাত। এটাই প্রমাণ করে যে, এটা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানুষের তৈরি বিপর্যয়। উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের জলবায়ু পরিবর্তনে এই আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশনের ভূমিকা আছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে একাডেমি বলছে, এই স্রোতের স্বাভাবিকতা নষ্ট হওয়া মানে পুরো অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন।
উষ্ণায়ন আর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় বাড়ছে বৃষ্টিপাত আর বরফ গলার পরিমাণ। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের চারপাশে দেখা দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। সমুদ্রের গরম পানি উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে, ঠাণ্ডা আর ঘন হওয়ার পর এটি দক্ষিণে চলে আসছে। কারণ বরফ গলা পানির সঙ্গে মিশে কমছে লবণাক্তটা, কমে যাচ্ছে স্রোতের গতিও। উত্তর আটলান্টিকে এসে এই পানি আরো শীতল হয়ে যাচ্ছে।
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ১৬শ’ বছরের তথ্য গবেষণা করে তারা দেখেছেন, এখনকার চেয়ে ১৫ শতাংশ দুর্বল হয়েছে সেখানকার সমুদ্রের স্রোত।
সমুদ্রের পানির উষ্ণতা আর বরফ গলার কারণে ধীরে ধীরে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, গেল ১৪০ বছরে ৮-৯ ইঞ্চি বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সমুদ্রের স্রোতের দুর্বলতা আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় অনেক অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তথ্য বলছে, আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশনে যদি চলমান গতিতেই পরিবর্তন আসে, তাহলে ২১০০ সাল নাগাদ ৩৪ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমবে সমুদ্রের স্রোত। হলিউডের দ্য ডে আফটার টমোরো মুভিটি সেই পূর্বাভাসই দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন কি কি বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে পৃথিবীতে।

পাঠকের মতামত: