কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

মহামারি কেনো আসে, কোরআন কী বলে

বিশ্ব আজ আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করা থেকে দূরে চলে গেছে এবং ভুলতে বসেছে। অনেকে তো আবার আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না। আর যারা আল্লাহর ওপর এবং আল্লাহর পাঠানো কিতাব কোরআনের ওপর বিশ্বাস রাখে, তারাও কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা বিকৃত করে এমনসব মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নিয়েছে, যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে আলো-বাতাসকে পর্যন্ত বিষাক্ত করে ফেলেছে।
আমাদের অন্যায়ের মাত্রা এতোটাই ছাড়িয়েছে যে, প্রতিটি অনু-পরমাণু পাপে ভরপুর হয়ে গেছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, চাকুরি যাই করি না কেন সব কিছুতেই অসততাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে যা বলছি তাও মিথ্যা বলছি, আল্লাহর জন্য যে নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়ার চিন্তায় এমনভাবে মগ্ন থাকা হয় যে- কখন নামাজ শেষ করে আবার দুনিয়ায় ঝুট-ঝামেলায় ফিরে আসব সে চিন্তাই থাকে।

আমরা যে একের পর এক মহামারি ও বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হচ্ছি এর মূল কারণ- আমাদের কাজকর্ম। আমার আমলই এসব মহামারি ডেকে আনছে। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন-
ﻇَﻬَﺮَ ﺍﻟْﻔَﺴَﺎﺩُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﺍﻟْﺒَﺤْﺮِ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﺃَﻳْﺪِﻱ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟِﻴُﺬِﻳﻘَﻬُﻢْ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢْ ﻳَﺮْﺟِﻌُﻮﻥَ
‘মানুষের নিজের কারণেই স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছেয়ে যায়। এর পরিণামে তিনি তাদের কোন কোন কাজের শাস্তির স্বাদ ভোগ করাবেন যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে।’ সূরা আর রূম, আয়াত ৪১।

যেহেতু আমাদের পাপের আঁধারে পৃথিবী ডুবে গেছে, তাই বিভিন্ন প্রাকৃতিক আজাব তা করোনা ভাইরাসের আক্রমণ বলুন বা ঘূর্ণিঝড় সিডর, বুলবুল, ভূমিকম্প- সবই মূলত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সতর্ক সংকেত।
আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করছেন, হে আমার বান্দারা, তোমরা সতর্ক হও, তোমরা অসৎ পথ ছেড়ে দিয়ে সৎ পথে চল, তোমরা সহজ সরল পথ অবলম্বন কর। বিষয়টিকে এভাবেও বলা যায়, সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যাভিচার, অন্যায় এবং নিজ প্রভুকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য শাস্তি দেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻣُﺼِﻴﺒَﺔٍ ﻓَﺒِﻤَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﺃَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﻭَﻳَﻌْﻔُﻮ ﻋَﻦْ ﻛَﺜِﻴﺮٍ
‘আর তোমাদের কর্মের কারণেই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক বিপদ এমনিতেই উড়িয়ে দেন।’ সূরা আশ শুরা: ৩০।
আমাদের অন্যায়ের কারণে আল্লাহর আজাব এসেছে। বালা-মুসিবত যখন ঐশী হয় তখন তা থেকে রক্ষা করার মালিকও তিনিই। যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে-
ﻗُﻞْ ﻣَﻦْ ﺫَﺍ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﻌْﺼِﻤُﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺑِﻜُﻢْ ﺳُﻮﺀًﺍ ﺃَﻭْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣْﻤَﺔً
‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোন শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি দয়া করতে চান তবে কে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে?’ সূরা আহজাব, আয়াত ১৭।

আল্লাহপাক আমাদের বার বার সতর্ক করছেন। এরপরও যদি আমাদের হুশ না হয় তাহলে আমরাও কী আদ ও সামুদ জাতিসহ অন্যান্য জাতি যেভাবে তাদের অপকর্মের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে, সেদিকেই এগুচ্ছি না তো?

তিনি যেহেতু রহমানুর রহিম, তিনি চান না যে, তার বান্দারা যেন কোনভাবে কষ্ট পায়। তাই তিনি বারবার সতর্ক করেছেন, তার বান্দারা যেন সঠিক পথে চলে। সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার এখন একটিই মাত্র রাস্তা খোলা আছে, আর তা হলো রহমান খোদার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া, আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ আদায় করা, নিজকে সংশোধন করা এবং নিজ আত্মাকে ধুয়ে মুছে পবিত্র করা।

পাঠকের মতামত: