কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মাদকের তথ্য দেওয়ায় সায়মনকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাদক সিন্ডিকেটের তথ্য দেওয়ায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে সায়মন ওরফে নূরে আলমকে (২৫) হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সায়মন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাব বলছে, নিহত সায়মন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স। এই হিসেবে কিছুদিন আগে তিনি গ্লাস কোম্পানি মাদক সিন্ডিকেটটির কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে তথ্য দেয়। এরপরই সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার সুমন ও তার সহযোগীরা ভিকটিম সায়মনকে তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে সন্দেহ করে। এরপরই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

গ্রেফতাররা হলেন- মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমন (২৯), মো. সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ (২৮), শরীফ ওরফে গরীব (২৯), জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি (৩২) ও হারুন (৩২)। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় সায়মনকে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত সায়মনের ভাই মো. আরস আলম ঢাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪। হত্যাকাণ্ডটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে গতকাল রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, সুমন ওরফে গ্লাস সুমন একটি মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা। সে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। কেরানীগঞ্জসহ পাশর্বর্তী এলাকায় সে গ্লাস কোম্পানি নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ চক্রে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন।

 

গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানায়, কিছুদিন আগে নিহত সায়মন গ্লাস কোম্পানি মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য দেয়। এর প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়। এরপরই সায়মনকে তারা সন্দেহ করে এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করে।

র‌্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে বালুরচর মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় গ্লাস সুমন ও তার অন্যান্য সহযোগী গ্রেফতার সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ওরফে ঘটি সোহাগসহ আরও কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় ৫-৬ জন অংশ নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি গ্লাস সুমন সিন্ডিকেট মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠিত করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার হারুন তথ্য দিয়ে হত্যাকারীদের সহযোগিতা করে। এরপর সুমন ও তার সহযোগীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় সায়মনকে পার্শবর্তী নির্মানাধীন ভবন থেকে জোরপূর্বক ধরে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এরপর ভিকটিমকে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা আহত সায়মনকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, গ্রেফতার গ্লাস সুমন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী; সে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময় সশরীরে উপস্থিত ছিল এবং নিজে ভিকটিমের রগ কাটে। এছাড়া গ্রেফতার লম্বু সোহাগ ও শরীফ ওরফে গরিব রগ কাটায় অংশ নেয়। জনি ও গ্লাস সুমন তখন সায়মনকে ধরে রাখে।

গ্লাস সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাই সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা রয়েছে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, সুমন আগে গ্লাসের দোকানে কাজ করতো এবং ভাঙা গ্লাস দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও জখম করার কারণে এলাকায় গ্লাস সুমন নামে পরিচিতি পায়। এছাড়াও গ্রেফতার লম্বু সোহাগ, হর্স পাওয়ার জনি ও হারুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, নিহত সায়মন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। মাদকের তথ্য দেওয়ার পরেই তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়।

পাঠকের মতামত: