কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাস্ক না পরায় বয়স্কদের কান ধরানো, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও

যশোরের মনিরামপুরে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করার পর এবার বৃদ্ধদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।

মণিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অবমানননার শিকার ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এসময় তিনি ওই বৃদ্ধদের হাতে চাল, ডাল, লবণ ও চিনিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য তুলে দেন। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে একটি করে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

অবমাননার শিকার প্রবীণ নাগরিকদের সাথে ঢাকা থেকে কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও। তিনি অস্বচ্ছল এই পরিবারগুলোকে সুবিচারের আশ্বাস ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বাড়ি নির্মাণ করে দেবার অঙ্গীকার করেন।

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে অপমানের শিকার ব্যক্তিদের বাড়িতে যাওয়া স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি প্রত্যেককে নগদ টাকাও অনুদান দেন।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ্ শরিফী বলেন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কর্মকাণ্ডের জন্যে প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তারপরও বয়স্ক মানুষেরা যারা অসম্মানিত হয়েছেন তাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি নিজেই প্রত্যেকের বাড়িতে যান এবং ক্ষমা চান।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লোকসমাগম ঠেকাতে মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চিনাটোলা বাজারে অভিযান চালানো হয়। এসময় মাস্ক না থাকায় চার অস্বচ্ছল বৃদ্ধকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন সাইয়েমা। ছবিটি পোস্ট করা হয় মণিরামপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সরকারি তথ্য বাতায়নেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ছবি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সামলোচনার ঝড় ওঠে। এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দেয় চরম অসন্তোষ।

ঘটনার শিকার ভ্যানচালক এক পঙ্গু বৃদ্ধ বলেন, এ ঘটনার পর তিনি বাড়িতে গিয়েও পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখাতে লজ্জা পান।

মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এ ঘটনায় খুবই নিন্দনীয়। মুরুব্বিদের এভাবে অপমান করা অন্যায়।

বিষয়টি নিয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, সহকারী ভূমি কমিশনারের এমন আচরণের আইনগত কোন অধিকার নেই। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি তিনি দেখার পরই ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেন।

শনিবার ঢাকায় জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের জানান, এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহারের পর তাকে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং ছুটির পর অফিস খুললে এ ঘটনায় তদন্ত টিম গঠন করা হবে। তদন্ত  প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইয়েমা হাসানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: