কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মিয়ানমারে ধর্ষণ, তিন সেনার ২০ বছরের কারাদণ্ড

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে গণধর্ষিত হয়েছিলেন থিয়েন নু। কিন্তু তিনি মাথা নত করে মেনে নেননি সব। দেশটির সবচেয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। সেই মামলায় কয়েক মাস ধরে লড়াই করেন।

অবশেষে তিনি বিজয় পেয়েছেন। পেয়েছেন সুবিচার, যা মিয়ানমারে কল্পনা করাও কঠিন। থিয়েন নু’কে ধর্ষণকারী তিন সেনা সদস্যকে কঠোর শ্রমসহ ২০ বছরের জেল দিয়েছেন আদালত। এতে থিয়েন নু মনে করেন, এই শাস্তি অন্য যেসব ধর্ষিতা আছেন বা নির্যাতিতা আছেন তাদের সাহস যোগাবে।

সেনাবাহিনীর দায়মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন তারা। থিয়েন নু ৩৬ বছর বয়স্ক চার সন্তানের মা। জুনে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তাকে গণধর্ষণ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই অঞ্চলেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গাদের ধনসম্পদ ধ্বংস করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে।

তা প্রামাণ্য আকারেও উপস্থাপন করেছে অনেক মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন। জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
থিয়েন নু ধর্ষিত হওয়ার পর সেনাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, আমার মতো অনেক নারীই একই ঘটনার শিকার হয়েছেন। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছেন।

কিন্তু তাদের মতো আমি যদি এটা গোপন করে যেতাম তাহলে রাখাইনে আরও মানুষ একই ঘটনার শিকার হতেন।
সেনাবাহিনী রাখাইনে কোনো ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নয় বলে আন্তর্জাতিক সংগঠনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু থিয়েন নু প্রমাণ করে দিয়েছেন, রাখাইনে ধর্ষণ করা হচ্ছে। আর তাতে জড়িত সেনাবাহিনী। কিন্তু তিনি অভিযোগ করেছেন। সাহস দেখিয়েছেন। ফলে সমাজে তাকে কলঙ্কিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমনকি তার স্বামী পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলেন না।

থিয়েন নু বলেন, একই সঙ্গে আমি খুশি এবং দুঃখিত। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সামরিক বিচারে তার পক্ষে রায় দেওয়া হবে। তবু থিয়েন নু বলেন, আমি বিচার পাওয়ার পরও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এই রায়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে। সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হবে। কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হলো অবিশ্বস্ত দু’মুখো মানুষ।

শনিবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আদালত তাদের সেনা সদস্যদের অন্যায়ের বিরল স্বীকারোক্তি দিয়েছে এই শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে। তারা ধর্ষক তিন সেনা সদস্যকে জেল দিয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা এতে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘ওয়াটারশেড’ দেওয়া হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তারা সতর্কতা দিয়েছেন।

হিউম্যান রাইট ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেছেন, সেনাবাহিনীর র‌্যাংকধারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মোকাবিলার জন্য মিয়ানমারেরে সেনাবাহিনী প্রস্তুত কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর আগে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা ভিকটিমের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছে। তিনি আরও বলেন, অনেক মামলার এমন বিচার দাবি করে। সামরিক আদালত তো কাজ করে রুদ্ধদ্বার।

এখন থেকে প্রায় ৬ মাস আগে থিয়েন নু-এর ওপর নেমে এসেছিল নৃশংস, ভয়াল সেই রাত। সে কথা এখনও দিবালোকের মতো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারেন তিনি। তিনি বলেন, অন্ধকার নেমে আসার পরপরই গ্রামে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলো। তিনি মেয়ে ও অন্যদের নিয়ে শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সঙ্গে ছিলেন অন্য নারী ও তাদের সন্তানরা। মধ্যরাতের দিকে চারজন সেনা সদস্য জোর করে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। শিশুরা কান্নাকাটি করছিল। ফলে সহজেই তাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় সেনারা।

থিয়েন নু বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম যে, তিন সেনা সদস্য আমাকে ধরেছে, তাদের চেয়ে শক্তিতে আমি দুর্বল। ফলে তাদের হাত থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। সেই রাতে তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে ওই সেনারা।

এ ঘটনার পর সন্তানদের নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালান। চলে যান সিতওয়েতে। সেখানে গিয়েই তিনি বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেন, তিন ধর্ষণকারী ছাড়াও চতুর্থ যে সেনা কর্মকর্তা সেখানে ছিল, তিনি ওই ধর্ষণ থামাতে পারতেন, তারও বিচার হওয়া উচিত।

সূত্র: আল জাজিরা

পাঠকের মতামত: