কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুহিবুল্লাহ ও ছয় খুন: গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও হত্যাকাণ্ড

জসিম উদ্দিন::

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকায় সেখানকার অলিগলিতে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। গভীর রাত পর্যন্ত ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলে যাওয়ার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার ভোরে ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় বার্স্ট ফায়ার ও কুপিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একইভাবে গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। তবে এসব হত্যাকাণ্ডকে অঘটন হিসাবে দেখছেন ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে উখিয়ার এফডিএমএন ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকের ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় একদল দুর্বৃত্ত এলাপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে নিহত হন মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ ইদ্রীস, নুর আলম ওরফে হালিম, হামিদুল্লাহ, ইব্রাহীম হোসেন, শিক্ষার্থী আজিজুল হক ও মো. আমীন। এর মধ্যে অনেকের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটা হয়েছিল।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে-এমন তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়। এরপর ক্যাম্পজুড়ে অলিগলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পুলিশের একাধিক টিম পৃথকভাবে টহল ডিউটি করে। যে মাদ্রাসায় হত্যাকাণ্ড ঘটনানো হয়েছে, সেখানেও একদল পুলিশ রাত তিনটা পর্যন্ত টহলে ছিল। সেখানকার টিমটি অন্য এলাকায় টহলে গেলে দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা চালায়।

ক্যাম্পে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার আরেকটি সূত্রের দাবি, মুহিবুল্লাহ হত্যার আগেও একইভাবে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তাকে বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকেও হুমকি দেওয়ার বিষয় বারবার সামনে আসে। এরপর মুহিবুল্লাহ ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় পুলিশ পাহারা থাকত। ঘটনার দিনও নামাজ শেষে শেডে (বাসায়) ফেরা পর্যন্ত পুলিশের একটি টহল দল তার বাড়ির আশপাশে ছিল। তিনি বাসায় ঢুকে গেছেন দেখে টহল দল সেখান থেকে অন্য স্থানে টহলে চলে যায়। এই সময়টাকে বেছে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।

এ বিষয়ে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক কামরান হোসাইন বলেন, ক্যাম্পের কয়েকটি এলাকায় নাশকতা হতে পারে-এমন একটি তথ্য ছিল আমাদের কাছে। যেসব এলাকার কথা বলা হয়েছিল, এর মধ্যে ওই মাদ্রাসাটিও ছিল। ঝুঁকির কথা চিন্তা করে ওই মাদ্রাসার আশপাশের এলাকায় আমরা রাতেই ব্লকরেইড পরিচালনা করি। রাত ৩টা পর্যন্ত কঠোর অবস্থান ছিল আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর। সেখানে থাকা টিমটি সোয়া ৩টার দিকে ক্যাম্প-১১তে ব্লকরেইডে গেলে ওই মাদ্রাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।

সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও কেন টহল টিমকে অন্য জায়গায় পাঠানো হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-অধিনায়ক কামরান বলেন, একটা জায়গায় তো সারাক্ষণ ব্লকরেইড করার সুযোগ নেই। ক্যাম্পের এরিয়া বড় হওয়ায় অন্য এলাকার নিরাপত্তাও দেখতে হয়। এ সুযোগটাই বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা আরও কয়েকগুণ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও যদি এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে তা বেদনাদায়ক ও উৎকণ্ঠার। তাহলে মনে করতে হবে শৃঙ্খলাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা জোরদারে এটি কাটিয়ে ওঠা দরকার।

১৪ এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক (এসপি) নাইমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহকে হুমকি বা তার নিরাপত্তাহীনতার কথা কখনো আমাদের জানানো হয়নি। এরপরও প্রত্যাবাসনপ্রেমী ও রোহিঙ্গা নেতা হিসাবে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রায় প্রতিনিয়ত মুহিবুল্লাহ ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রহরা থাকত। ঘটনার দিন পুলিশ চলে যাওয়ার পর তার ওপর হামলা করা হয়েছিল। যুগান্তর

পাঠকের মতামত: