কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মুহিবুল্লাহ হত্যা: গুলিবর্ষণকারি রহিম, ছমি ও জাহিদকে খুঁজছে পুলিশ

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের ৬ মাস চললেও এখনো চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে তদন্তকারি কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে হত্যাকান্ড সরাসরি জড়িত এবং মুহিবুল্লাহকে গুলি করা আব্দু রহিম, ছমি উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন লালুকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আর পলাতক এই ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই মামলার অনেকটায় অগ্রগতি হবে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। তাঁর পরিবার এ হত্যার জন্য কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনকে দায়ী করে আসছে।
পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ ৬ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা জাকারিয়াকে। তিনি কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনের ওলামা শাখার প্রধান হিসেবে পরিচিত। আর এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শিবির থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করা আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ভাই মো. শাহ আলীকে।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত ১৫ জনকে আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারমধ্যে আসামি আজিজুল হক, হামিদ হোসেন, নাজিম উদ্দিন ও মো. ইলিয়াস হত্যায় সরাসরি অংশ নেন বলে জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেন। পরবর্তীতে এই ৪ জন আসামী আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দিন বলেন, “মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে কতজন অংশ নেন এটি সুনির্দিষ্টভাবে এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ এই হত্যায় বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কিভাবে হত্যা করা হবে তার পরিকল্পনা, কোন কোন পথ ব্যবহার করা হবে, কে কোন দায়িত্বে থাকবে, কারা মুহিবুল্লাহ’র অফিসে ঢুকবে এবং হত্যা করে কোন কোন পথ ব্যবহার করে বের হয়ে যাবে এসবে বেশ কিছু ব্যক্তি অংশ নেন। তাই সুনির্দিষ্টভাবে কতজন হত্যাকান্ডে অংশ নেয় এটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।”
গাজী সালাউদ্দিন বলেন, মূলত এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কারণ মুহিবুল্লাহ ক্যাম্পে বড় নেতা হয়ে উঠা, প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করা এবং মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় কথিত সন্ত্রাসী সংগঠন পরিকল্পনা করে হত্যা করে, যা গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসে। তবে এই হত্যাকান্ডে মিয়ানমার, আন্তর্জাতিক মহল বা আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী সরাসরি জড়িত কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এই ব্যাপারেও তদন্তে অব্যাহত রয়েছে। মুহিবুল্লাহ হত্যার নির্দেশদাতা আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গাজী সালাউদ্দিন আরও বলেন, মামলার তদন্ত অগ্রগতির জন্য পুলিশ বিশেষ করে ৩জন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে মুহিবুল্লাহকে প্রথম গুলি করা আব্দু রহিম ও অপর গুলি করা দুই জন ছমি উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন লালুকে। যারা হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা মিয়ানমারের গহীন জঙ্গলে রয়েছে। মাঝে মধ্যে তারা ক্যাম্পেও আসে। তবে, ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে; তাদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার চার্জশিটের ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড। সব বিষয় নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে, এক্ষুনি চার্জশিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরও কিছু বিষয় আছে, যা বের করে আনতে হবে। এই জন্য আব্দু রহিম, ছমি উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন লালুকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। এই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই মোটামুটি মামলার বাকি তথ্যগুলো পাওয়া যাবে। তারপরই মামলার চার্জশিট দেয়ার চেষ্ট করব। আর এদেরকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কি করব তা সিদ্ধান্ত নিব।
এদিকে উখিয়াস্থ ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক নঈমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারে এপিবিএন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে অনেকেই এপিবিএন গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এ ঘটনায় জড়িত আব্দু রহিম, ছমি উদ্দিন ও জাহিদ হোসেন লালুকে গ্রেপ্তারের সাড়াশি অভিযান চলছে। তবে ঘটনার পর থেকে তারা মিয়ানমারে পালিয়ে এ ধরণের তথ্য পেয়েছি। তারপরও যদি তারা ক্যাম্পে থেকে থাকে কিংবা ক্যাম্পে আসে তখনই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। বর্তমানে মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে এপিবিএন।

পাঠকের মতামত: