কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মোটা মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি

বিশ্বজুড়েই স্থুলতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বাড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগেই মোটা মানুষরা বেশি আক্রান্ত হন। এখন জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের সঙ্গেও অতিরিক্ত ওজন এবং স্থুলতার সম্পর্ক রয়েছে।

অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতা- বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষেরই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতার কারণে শরীরে একাধিক রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধে।

ভাবছেন, করোনা আতঙ্কের কারণে হঠাৎ আবার অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতা নিয়ে মাথা ঘামানোর কী হলো! কারণ হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে,যে কোনও বয়সের এবং ওজনের মানুষই নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-19) আক্রান্ত হতে পারেন। সংক্রমণের দিক থেকে সবারই ঝুঁকিই সমান। কিন্তু সংক্রমণের পর প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারা, সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয়ের সম্পর্ক আছে। যেমন-ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। আবার এরা সুস্থ হলেও সেরে উঠতে অন্যদের তুলনায় বেশি সময় লাগে এবং অসুস্থতা কষ্ট পেতে হয় বেশি।

সম্প্রতি চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের মানুষ বা মোটা মানুষের মধ্যে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি।

মার্কিন গবেষকদের দাবি, অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতার জন্যই আমেরিকায় করোনাভাইরাস মহামারির আকার নিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা আর ভয়াবহতায় চীন, ইতালি, স্পেনকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

গবেষকদের দাবি, যাদের বিএমআই ২৫ থেকে ৪০ বা তার বেশি, তাদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিএমআই কী? আদর্শ ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তির ওজন কিলোগ্রামে মাপা হয় এবং উচ্চতা মিটারে মাপা হয়। ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দিয়ে ভাগ করা হয়। এই ভাগফলকেই বিএমআই বলা হয়। বিএমআই ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে হলে তা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।

‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ নাগরিক স্থূলতার শীকার। সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান সামনে এসেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় এ পর্যন্ত যতজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশের বিএমআই ২৫ থেকে ৪০। মোট আক্রান্তের ৭ শতাংশের অবস্থা সঙ্কটজনক যাদের বিএমআই ৪০-এরও বেশি।

তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, আমেরিকার থেকে শিক্ষা নিয়ে নজর দিতে হবে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানোর বিষয়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ফলে অতিরিক্ত মোটা মানুষদের প্রাণহানির ঝুঁকি বেশি। এর পিছনে কতগুলো কারণ রয়েছে। আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক…

১) স্থূলতার কারণে এমনিতেই দীর্ঘস্থায়ী কিছু রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। এই কারণে তাদের সহজেই থাবা বসাতে পারে করোনাভাইরাস।

২) অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতায় ভুগছেন যে সমস্ত ব্যক্তি, তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক কম হয়। ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

৩) অধিকাংশ মোটা মানুষেরই ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আগে থেকেই থাকে। আর এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধির উপস্থিতিতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ।

৪) ওজন বেশি হলে ফুসফুসের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে আর করোনাভাইরাস যেহেতু ফুসফুসকেই সবার আগে আক্রমণ করে, তাই মোটা মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

সমীক্ষায় জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশের শরীরে ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হার্ট, ওবিসিটি, উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল। সূত্র: জি নিউজ

পাঠকের মতামত: