কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

যোগদানের পরপরই যে কারণে সরানো হলো দুই ওসিকে

আবু তাহের ::

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর পর কক্সবাজারের জেলা পুলিশে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। পুলিশেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। সাসপেন্ড হয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে তিনি এখন রিমান্ডে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ওসি আবুল ফয়সাল। যোগদানের ১১ দিনের মাথায় তাকে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান কবিরকেও। তার পদে যোগদান করেছিলেন একই থানার ওসি তদন্ত মো. খায়রুজ্জামান। দায়িত্ব গ্রহণের তিন দিনের মাথায় তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যোগদানের পর পরই কেন দুই ওসি বদলি হলেন তা নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা।

সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভি ফুটেজকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করেছিলেন। ৩১ জুলাই ও তার পরবর্তী সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ পেতে তিনি আদালতে আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন। তিনি ১৮ আগস্ট সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু তিনি সেই সিসিটিভি ফুটেজ পাননি। টেকনাফ মডেল থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি আবুল ফয়সাল তাকে লিখিতভাবে জানান, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নষ্ট থাকায় ফুটেজ দেওয়া যাচ্ছে না।

র‌্যাবের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে স্পর্শকাতর বিষয় থাকায় তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার বিষয়টি আইও তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আদালতকে অবহিত করেন। ৯ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানার নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন আবুল ফয়সাল।

এদিকে সিনহা হত্যা মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে ১১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়া মারিশবূনিয়ার নুরুল আমিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ঘটনার পর পরই পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগমকে টেকনাফ মডেল থানায় এনে একটি অপহরণ মামলা করায়। অথচ সেদিনই নুরুল আমিনকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভি ফুটেজ সরিয়ে ফেলা এবং সিনহা হত্যা মামলার আসামি নুরুল আমিনের মাকে বাদী করে অপহরণ মামলা করানোর কারণে যোগদানের ১১ দিনের মধ্যে বদলি করা হয়েছে আবুল ফয়সালকে। ২০ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে সংযুক্ত করা হয়। টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে ভারপ্রাপ্ত ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আবুল ফয়সালের অদক্ষতার কারণে তাকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রদীপের স্থলাভিষিক্ত হয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেননি ফয়সাল।

যে কারণে বদলি হলেন সদর থানার ওসি : কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি খায়রুজ্জামানকে ১৭ আগস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন দিনের মধ্যে তাকেও শিল্প পুলিশে বদলি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিনহার টিমের সদস্য শিপ্রা রানী দেবনাথ সাতক্ষীরার এসপি মোস্তাফিজুর রহমান ও পিবিআই ঢাকার (উত্তর) এসপি মিজানুর রহমানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১৮ আগস্ট রাতে মামলা করতে যান সদর থানায়। তার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে সামাজিকভাবে হেয় ও মানহানি করার অভিযোগ করেন শিপ্রা। তবে ওসি খায়রুজ্জামান এই মামলা নেননি। অভিযোগ রয়েছে, আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘটনাস্থল হিসেবে রামু থানায় অথবা ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করতে পরামর্শ দেন খায়রুজ্জামান।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, শিপ্রার মামলা না নেওয়ার বিষয়টি সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে খায়রুজ্জামানকে বদলি করা হয়েছে। তার চাকরি শিল্প পুলিশে ন্যস্ত করা হয়েছে। ১৭ আগস্ট খায়রুজ্জামানকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন একই থানার ওসি তদন্ত মাসুম খানকে ভারপ্রাপ্ত ওসির দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: