কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রাজস্ব আয় বাড়াতে ৫ কৌশল

রাজস্ব আয় বাড়াতে পাঁচ কৌশল নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী খুচরা পর্যায়ে ৫ লাখ ইলেক্ট্রনিক ফিসকল ডিভাইস (ইএফডি) বসানো হবে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট ব্যবস্থাপনা প্যানেলের এক সভা এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বছরজুড়ে করোনভাইরাসের কারণে রাজস্ব আদায়সহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া অনেকের মধ্যে কর ফাঁকির প্রবণতা রয়েছে। কর ফাঁকির প্রবণতা কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সভায় পাঁচ কৌশল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের শপিংমলগুলো থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সব ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ইএফডি বাধ্যতামূলক ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা, আয়করের আওতা সম্প্রসারণ, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন, বন্ডেড ওয়্যার হাউজগুলোর অটোমেশন এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানো।

সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে তীব্র সংকট সৃষ্টি করেছে। কারণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমাতে হয়েছে। অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে অনেক লোক বেকার হয়ে পড়েছে।

এ ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সরকার গত বছর জুলাইয়ের শুরুতে অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে বাধ্য করেছিল। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার ৩,৩৫,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল, যা ৩,৪৯,০০০ কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ কম এবং ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকার মূল ব্যয়ের চেয়ে ১১ শতাংশ কম।

এ বিষয়ে এনবিআর এর সাবেক সদস্য বছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে যতদিন পর্যন্ত কর ফাঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে শাস্তির সংস্কৃতি গড়ে না উঠবে, সে পর্যন্ত কর ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আর এ ব্যবস্থা না নিলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এছাড়াও দেশে আয় করদাতাদের সন্ধানের জন্য জরিপের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে দাতা সংস্থাগুলো বহুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে। এজন্য ইএফডি মেশিন বসানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু সে পরিকল্পনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে করের জালকে আরও প্রশস্ত করতে সরকারের উচিত কার্যক্রম জোরদার করা।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে রাজস্ব আদায় ত্বরান্বিত করার জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করার উদ্যোগ নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল এম রেজাউল করিম সরকার রবিন বলেছেন, ভ্যাট সংগ্রহের জন্য এনবিআর কর্মকর্তারা এখন মহামারিজনিত কারণে শত শত রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকার পরও বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত রেস্তোরাঁগুলো দৃঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

সূত্র জানায়, ঢাকা শহরেই ৬০ হাজারেরও বেশি হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং মিষ্টি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন লেনদেন ট্র্যাক করতে এবং খুচরা দোকান থেকে ভ্যাট সংগ্রহ নিশ্চিত করতে দুই লাখ ইএফডি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এগুলো বসানোর পর বিদ্যমান ইসিআরগুলো সরিয়ে ফেলা হবে।

২০০৮ সালে এনবিআর ১৩ ধরনের ব্যবসায়ের জন্য ইসিআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিল। এগুলো হচ্ছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্ন, গহনা, বিউটি সেলুন, ফার্নিচার শপ, আরএমজি শপ বা বুটিক শপ, ইলেকট্রনিক্স শপ, কমিউনিটি সেন্টার, সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষঠান শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সাধারণ দোকান বা সুপার শপ, পাইকার এবং বড় খুচরা দোকান।

পাঠকের মতামত: