কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সন্ধ্যা নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায় কক্সবাজার সৈকত

তারেকুর রহমান::

কক্সবাজারে সৈকতজুড়ে সারিবদ্ধ ফ্লাড বাতি থাকলেও জ্বলে না রাতের বেলায়। ফলে সন্ধ্যা নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায় সৈকত আর ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় সৈকতের বুকে। এর সুযোগ নিয়ে ঘটছে ছিনতাই, পর্যটক হয়রানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া সমুদ্রসৈকত খুলেছে প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর। ইতোমধ্যে পর্যটকও আসতে শুরু করেছে। কিন্তু দূর-দূরান্ত কিংবা দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকরা সৈকতে সন্ধ্যার পর আতঙ্ক নিয়ে ঘোরেন। অথচ কয়েক গজ দূরে দূরে রয়েছে সারিবদ্ধ ফ্লাড বাতির খুঁটি। একটা-দুটা জ্বললেও অকেজো বেশিরভাগ বাতি।

পর্যটকরা বলছেন, শুধু দিনের সৌন্দর্য নয়, রাতের সৌন্দর্য দেখার জন্যেও অনেকে কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু সন্ধ্যা বেলায় বালিয়াড়ি সৈকতে ঢুকতেই আতঙ্কে পড়ে যান। আলো বিহীন সৈকতে ঘুরে বেড়াতে ভয় পান তারা। দলবদ্ধ ছাড়া একা একা ঘুরে বেড়ানোর কোনো পরিবেশ পাচ্ছেন না সমুদ্রসৈকতে। যারা একা বা দুইজন বেড়াতে আসেন তারা নিরাপদে বিচের এদিক-ওদিক যেতে পারছেন না।

সন্ধ্যার পর লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু করে লাবণী পয়েন্টের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত ৪৭টি ফ্লাড বাতির মধ্যে শুধুমাত্র ৬টি বাতি জ্বলছে, তাও মিটিমিটি। শতাধিক পর্যটক জিও ব্যাগের (বালির ব্যাগ) উপর বসে সময় কাটাচ্ছেন।

সন্ধ্যার পর একটু না হেঁটে জিও ব্যাগে বসে আছেন কেন জানতে চাইলে মিরপুর-১১ থেকে আসা সাজ্জাদ মিয়া বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো পর্যটন শহরের সৈকতে বাতি থাকা সত্ত্বেও আলো জ্বলে না। এটা দেখতে কেমন জানি লাগে। সন্ধ্যার পর একটু হাঁটবো, নিরিবিলি কোথাও বসবো, আমার নিরাপত্তা কোথায়? বিচ তো পুরো অন্ধকার। একটু একটু আলো আসছে; তাও আবার চা-চটপটির দোকানের বাতির আলো। তাই অন্ধকারে ঘোরাঘুরি না করে বসে আছি।’

নতুন বিয়ে করে রংপুর থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এলেন আবির-নুসরাত দম্পতি। সন্ধ্যার সময় কিটকট ছাতার (বিচ ছাতা) পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।

আবির বলেন, ‘এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসলাম। গতবারের চেয়ে এবার সৈকত বেশি অন্ধকার অন্ধকার লাগছে। সুগন্ধা পয়েন্টে দেখছিলাম রাতের বেলায় একটা ফ্লাড বাতি জ্বলছে। বাকিগুলো জ্বলছে না। প্রথমে মনে করেছিলাম একটা বাতি জ্বালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ, কিন্তু পরে জানতে পারলাম অন্য বাতিগুলো নষ্ট তাই জ্বলে না। এই রকম হলে তো পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে। এই রকম পরিবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও তেমন চোখে পড়েনি।’

এদিকে, লাবণী পয়েন্টের উত্তরে ঝাউ বাগান ঘেঁষে সারিবদ্ধ অনেক ফ্লাড বাতি থাকলেও জ্বলতে দেখা যায়নি। ব্যস্ততম সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টেরও একই অবস্থা।

সীতাকুণ্ড থেকে আসা রণধীর শর্মা বলেন, ‘দুই বন্ধু হেঁটে হেঁটে ঝাউবনের পাশ দিয়ে কবিতা চত্বর যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু একজন ট্যুরিস্ট পুলিশ বলেন ওইদিকে অন্ধকার যাওয়া ঠিক হবে না। তখন তাকে বললাম এই লাইটগুলো কি জ্বলে না? তখন তিনি বললেন, ‘না জ্বলে না।’
আর ওইদিকে যাইনি।’

অন্ধকারাচ্ছন্ন সৈকতে যেখানে মানুষের হাঁটাচলা কম সেসব স্থানে ছিনতাই, হয়রানি ও নানা অপকর্ম নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

পর্যটন ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে আলোকিত করা অবশ্যই প্রয়োজন। দিনে কিংবা রাতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে কক্সবাজার ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবে দেশি বিদেশি পর্যটক।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৈকতে অকেজো বাতিগুলো সচল করার ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি। ইতোমধ্যে কিছু কিছু বাতি সচল করা হয়েছে। বাকি বাতিগুলোও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করা হবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে দিবারাত্রি সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছেন বলেও জানান এএসপি মহিউদ্দিন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। স্বাস্থবিধি মেনে তারা যেন সমুদ্রসৈকত উপভোগ করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তাসহ সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ইতোমধ্যে যে কয়টি ফ্লাড বাতি নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।’

সৈকত ও পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজারে প্রতিদিন যে সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণে আসেন তার অর্ধেক ঘুরে বেড়ান রাতের সৈকতে। কিন্তু সৈকতে ফ্লাড বাতি না জ্বলায় রাতের ভ্রমণ মাটি হয়ে যায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা এসব ভ্রমণপিপাসুদের।

পাঠকের মতামত: