কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রামুতে ধর্ষিতার বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা, ধর্ষক অধরা!

মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক, রামু::

কক্সবাজারের কাছের উপজেলা রামুতে আলোচিত ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর দিনমজুর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর ওই ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনা ও মামলা হওয়ার এক সপ্তাহ পরও ধর্ষক বাবুল গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো ধর্ষকের পরিবারের অব্যাহত হুমকিতে ধর্ষিতার বাবা নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ধর্ষিতার মা বাড়ির বাইরে গেলে ধর্ষিতার বাবা দিনমজুর আবদুল মাজেদ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। ঘটনাটি দেখে তাদের ৫ বছরের ছোট্ট শিশু চিৎকার দিয়ে অদূর থেকে ঘটনাটি মা’কে জানালে তিনি রশি কেটে মাজেদকে উদ্ধার করেন।

এদিকে প্রভাবশালী ধর্ষকের আত্বীয় স্বজনের অব্যাহত হুমকিতে ধর্ষিতার বাবা আবদুল মাজেদের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মানুষ তাদের বাড়িতে গিয়ে শান্তনা দেন। খবর পেয়ে ওইদিন বিকেলে সাবেক সাংসদ মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর মেয়ে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ধর্ষিতার বাড়িতে যান এবং এতদিন ধর্ষক গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সুত্র মতে, ওই পরিবারকে হুমকিদাতাদের উদ্দেশ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে নিরাপত্তা বিবেচনায় ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ রোববার দুপুরে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার দিনমজুর আবদুল মাজেদের মেয়ে, স্থানীয় মৈষকুম ওসমান সরওয়ার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষিত হয়।

মামলার বিবরণ ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, ওইদিন নারী দিবসে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেয়েটি পার্শবর্তী ছরা থেকে কলসী করে পানি এনে গরুকে খাওয়াচ্ছিল। এক পর্যায়ে কাউয়ারখোপ পূর্বপাড়ার মৃত ইয়াছিনের ছেলে জসীমুদ্দিন বাবুল পার্শবর্তী পাহাড়ি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখিয়ে ধর্ষিতার হাতে ২০ টাকা গুঁজে দেয়।

ভয়ার্ত মেয়েটি দুইদিন ধরে ওই ঘটনা বাবা-মাকে না জানালেও মঙ্গলবার সকাল থেকে মেয়েটি ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে সে বাবা-মাকে পুরো বিষয়টি খুলে বলে।

মেয়েটির মা আত্মীয়দের সহায়তায় গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে জসীমুদ্দিন বাবুলকে প্রধান আসামি করে রামু থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।

সুত্র জানায়, মামলার পর থেকে আসামী গ্রেপ্তার হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ধর্ষিতার পরিবারকে মামলা আপসের জন্য নানামুখী চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকা বর্তমান সরকারের এই সময়ে এরকম দিনদুপুরে লোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনায় এখনও ধর্ষক জসিম উদ্দিন বাবুল ধরা না পড়ায় জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ইতোপুর্বেও ওই বাবুল কাউয়ারখোপ বাজার ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি একাধিক মেয়ের সম্ভ্রমহানি করেছে।

কাউয়ারখোপ মৈষকুম ওসমান সরওয়ার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, ঘটনার কয়েকদিন পর তারা বিষয়টি জেনেছেন। দ্রুত সময়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ধর্ষককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, ঘটনার ৩ দিন পর মেয়েটির বাবা-মা থানায় এসে এজাহার দিলে তা গুরুত্ব সহকারে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: