কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রামু জনস্বাস্থ্যের কর্মচারী ইখতিয়ারের বদলী ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মচারী ইখতিয়ার উদ্দিন বদলী ঠেকাতে মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে বলে সুত্রে জানা গেছে। গত ১৩ অক্টোবর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের চট্টগ্রাম সার্কেলের কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন দেওয়ান স্বাক্ষরিত ৫৪৯ নং স্বারকে রামু জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিক পদের কর্মচারী ইখতিয়ার উদ্দিনকে জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারনে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায় বদলি করা হয়। বদলীর ৬ দিন অতিবাহিত হলেও সেই বিতর্কিত ও দূূর্নীতিবাজ কর্মচারী ইখতিয়ার উদ্দিন বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেনি। কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে রামু জনস্বাস্থ্য অফিসে বহাল তবিয়তে থাকার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোপন সুত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে মোটা টাকার মিশন নিয়ে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে চেষ্টা তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্ত কর্মচারী ইখতিয়ার উদ্দিনের বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার মাতবর পাড়া এলাকায়। সে বিগত ২০১৭ সালে রামু উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে নলকুপ মেকানিক পদে যোগদান করেন। সরকারী কর্মস্থলে তিন বছর কর্মরত থাকার পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বদলীর জন্য সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের লিখিত নির্দেশনা থাকলে ও রামু জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিক ইখতিয়ার উদ্দিনকে এতোদিন বদলি করা হয়নি। জানা যায়, ইখতিয়ার উদ্দিন একটানা একই কর্মস্থলে বিগত ৬ বছরের অধিক সময় ধরে রামু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে বহাল তবিয়তে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ কর্মচারীকে সম্প্রতি ফেনী বদলী করেন। অভিযোগ রয়েছে, একই কর্মস্থলে ৬ বছর ধরে কর্মরত থাকার সুযোগকে পুঁজি করে ইখতিয়ার উদ্দিন রামুর বিভিন্ন ইউনিয়নে পাড়া মহল্লায় গড়ে তোলেছে দালাল আর টাউট বাটপারদের সমন্বয়ে একটি বিশাল সিন্ডিকেট।
জানা যায়, রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিগত ৬ বছরে ধরে সরকারী টিউবওয়েল বাণিজ্য, সাব ঠিকাদারী, ব্যবসাসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা ইখতিয়ার উদ্দিন নিজ কর্মস্থলে সংগঠিত করেনি।
এব্যাপারে রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা এলাকার ফরিদুল আলম নামে এক ব্যক্তি তার অনিয়ম দূর্ণীতির বিরুদ্ধে ঢাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত এক উপজেলায় চাকুরীর সুবাধে রামু জনস্বাস্থ্যের নলকুপ মেকানিক ইখতিয়ার উদ্দিন একটি সিন্ডিকেট গঠন করছে। সাইটগুলো পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে। সাইটে গিয়ে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে সুবিধাভোগী (বাড়িওয়ালাদের) কাছ থেকে সাইট খরচ আদায় করেন। গ্রামীণ প্রকল্পের ২০১৯ইং থেকে ২০২২ইং সালের সাইট গুলোতে গিয়ে তদন্ত করলে কত টাকা করে নলকূপের জন্য নিয়েছে তার সত্যতা বের হয়ে আসবে।
এছাড়া বর্তমানে জরুরী প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে যে টয়লেট গুলো প্রদান করা হচ্ছে সেখানে প্রতি টয়লেটের জন্য পাচঁ থেকে দশ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। টিউবওয়েলের ক্ষেত্রেও পয়ঁত্রিশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ইখতিয়ার উদ্দিনের নানা অনিয়ম ও দূূর্ণীতিতে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সায় রয়েছে বলেই অভিযুক্ত ইখতিয়ার উদ্দিন বারে বারে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এদিকে জনস্বাস্থ্য অফিসের একজন নলকুপ মেকানিক হয়েও তার আলিশান জীবন যাপন মানুষের মুখে মুখে। তাঁর নিজ বাড়ি কুতুবদিয়ায় রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের মাছ ধরার ট্রলার। রয়েছে শুটকি আড়তের ব্যবসাও। ১৭ গ্রেডের চাকরিজীবি হয়ে কিভাবে এতো বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেলেন তা খতিয়ে দেখতে এবং অভিযুক্ত কর্মচারীর বিষয়ে আনীত অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন ফরিদুল আলম। এদিকে গত ১৩/১০/২২ ইং ইখতিয়ার উদ্দিনের বদলীর অর্ডার হলেও উক্ত অর্ডার বাতিল করার লক্ষ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রফা দফা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ফরিদুল আলম।
এব্যাপারে রামু উপজেলা জনস্বাস্থ্যের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ক্যছাই মং চাক্ বলেন, নলকুপ মেকানিক ইখতিয়ার উদ্দিনের বদলির আদেশ হয়েছে। তবে তার কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার কারনে সাময়িক বিলম্ব হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বদলি একটা চলমান প্রক্রিয়া। যথাসময়ে বদলি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানান।
যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন আকারে অবগত করা হবে।

পাঠকের মতামত: