কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রামু সহিংসতা : সাক্ষ্যদানে অনীহায় থমকে আছে বিচারকাজ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৃষ্ট গুজবের জের ধরে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নয় বছর পূর্ণ হয়ে ১০ বছরে গড়াল আজ।

এক সময়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরখ্যাত রামুতে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। তবে, এখন সম্প্রীতির বন্ধনে রয়েছে সব ধর্মের মানুষ। কিন্তু, সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনিহায় রামুর ঘটনার বিচারকাজ থমকে আছে। ঘটনার বিচারকাজ শেষ করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের মানুষের সম্প্রীতি অটুট থাকুক—এমনটাই দাবি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি ছবি ট্যাগকে কেন্দ্র করে রামুতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ ঘটনা। রাতের অন্ধকারে রামুতে ১২টি বৌদ্ধ বিহার এবং ৩০টি বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃতকারীরা। এর পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি বৌদ্ধ বিহার এবং ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার ও ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেয় সরকার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নান্দনিকভাবে নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রামুর সহিংসতার ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলা আপসে নিষ্পত্তি হয়। এজাহারভুক্ত ৩৭৮ জনসহ অজ্ঞাত আরও প্রায় দেড় হাজার জনকে অভিযুক্ত করে ১৯টি মামলা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৮টি মামলায় এক হাজার ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, ঘটনার ১০ বছরে এসে এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে সব সম্প্রদায়ের মানুষের সম্প্রীতি অটুট থাকুক।

কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবং রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, ঘটনার নয় বছর পার হয়ে গেছে। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মামলার প্রথম দিকে যে গতি ছিল, তা ভাটা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আর এগোতে চায় না। সবকিছু যেন ঠিক হয়ে গেছে—এমন ভাব সবার। যার দরুণ মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও ভুক্তভোগী সাক্ষীদের মধ্যে সমন্বয় করে মামলার সুরাহা হবে বলে আশা করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় গুরু।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, রামুর ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করলেও, পরবর্তীকালে বিবাদীদের সঙ্গে আপসনামায় নিষ্পত্তি হয়। বিচারাধীন ১৮ মামলায় আদালতে সাক্ষী না আসায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। তবে, সাক্ষীদের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সব মামলা নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ কৌঁসুলি।

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন আর কোনো সহিংসতা না হয়, তার জন্য সজাগ থাকার কথা বলছেন সবাই।

পাঠকের মতামত: