কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গাদের অভিশাপেই সু চির এই পরিণতি?

অং সান সু চি। মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে খ্যাত জেনারেল অং সানের এই কন্যার রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছিল নব্বই দশকে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় কয়েক মেয়াদে প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলেন তিনি। গৃহবন্দী থাকাকালে ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান সু চি। কিন্তু আদতেই কি শান্তির দূত কিংবা গণতন্ত্রকামী ছিলেন? নাকি তিনি স্রেফ ক্ষমতালোভী ছিলেন?

২০১০ সালে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান সু চি। তিনি যে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে চলেন এবং মুসলিম বিদ্বেষ পুষে রাখেন তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৫ সালের নির্বাচনে। নিজের দলকে মুসলিমমুক্ত তকমা লাগাতে ওই নির্বাচনে কোনো মুসলিমকে দলীয় প্রার্থী করেননি সু চি।

গণতন্ত্রের এই মানসকন্যা যে সেনাবাহিনীর অনুরক্ত তা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায় নির্বাচনে বিজয়ের পর। সেনা আমলে সংখ্যালঘু ও মুসলিমদের প্রতি রাষ্টীয় সহিংসতা উস্কে দেওয়া, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর চর্চা তার সরকারের আমলে পুরোদমেই চলেছে। দেশ শাসনের পাঁচ বছরে তিনি নিজেকে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।

২০১৭ সালের অগাস্টে পশ্চিম রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর যথেচ্ছ অত্যাচার চালায় সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের একের পর এক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে তাদের হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করে তারা। প্রাণে বাঁচতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। প্রায় এক বছর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখই খোলেননি সু চি। যখন মুখ খুললেন তখন সামরিক বাহিনীর নিন্দা কিংবা রোহিঙ্গাদের ওপর তাদের নৃশংসতার মাত্রা স্বীকার করেননি তিনি। উল্টো জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধনের উদহারণ বললেও সেই বক্তব্য উড়িয়ে দেন সু চি।

২০১৯ সালে হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন সু চি। হেগ থেকে দেশে ফিরে গিয়েও রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেবে, ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইনে এখনও বন্দিশিবিরের মতো স্থানে রাখা হয়েছে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে। বাংলাদেশে আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও কোনো উচ্চবাচ্য করেননি সু চি। বরং তার সরকারের আমলেই রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে নির্যাতন বা ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহ্ন আর অবশিষ্ট না থাকে।

যাদেরকে বন্ধু ভেবেছিলেন সেই সেনাদের হাতেই শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হলেন তিনি। হয়তো এটাই ছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গার অভিশাপ।

পাঠকের মতামত: