কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা তাহসানের!

রোহিঙ্গাদের নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনার কথা জানালেন দেশের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান। একই জনগোষ্ঠীর ওপর একটি গান নিয়েও কাজ করছেন তিনি।

শনিবার (২ জানুয়ারি) ইউএনএইচসিআর-এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তাহসানের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনিই প্রথম কোনও বাংলাদেশি, যিনি এই দায়িত্ব পেলেন।

এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাহসান বলেন তার নানাবিধ পরিকল্পনার কথা। তার ভাষায়, ‘আমরা প্রথমে আলোচনা করছিলাম রোহিঙ্গাদের জন্য একটি গান করার। এর ওপর ভিত্তি করে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল কাজও হতে পারে। এরপর আলোচনায় এলো রোহিঙ্গাদের ওপর ছোট নাটিকা বা সিনেমা বানানোর। বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে, যা ভবিষ্যতে হতে পারে। আমরা চাই এসব নির্মাণের মাধ্যমে মূলধারার মিডিয়াতে রোহিঙ্গাদের কথা যেন প্রচার হয়, তাদের প্রতি যেন সবাই মানবিক হয়।’

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসাবে কাজের সুযোগ পাওয়া প্রসঙ্গে তাহসান বলেন, ‘আমি আনন্দিত এবং একই সঙ্গে শঙ্কিত যে, এতবড় দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো কি না। এরজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে গত দেড় বছর ধরেই কাজ করছেন তাহসান। ২০১৯ এর জুনে প্রথম কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এই তারকা। তখন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে নিজের ভেতর বিশেষ পরিবর্তন অনুভব করেন। প্রার্থনা করেন এই জনগোষ্ঠীর মঙ্গলের জন্য।

তিনি বলেন, ‘দুদিন সেখান থেকে ফেরত আসার পরে আমার মাঝে একটি পরিবর্তন এসেছে। এরপরে আমি ইউএনএইচসিআর-এর কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেছি। কিন্তু ওই সফরটি আমার মানসিক দিকটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি তখন থেকেই চাইছিলাম এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করার।’

নিজের ভেতর কেন এই পরিবর্তন সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর আগে ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এবং গ্রুপের নাম ছিল ব্ল্যাক। তখন আমাদের পরিচিতি খুব একটা নেই। ওই সময়ে চিটাগাং-এ কনসার্ট করতে গিয়েছি। কনসার্ট থেকে রাতের বেলা যখন ফেরত আসবো তখন ২৫-২৬ জন ছেলে আমাকে অপহরণ করে এক জায়গায় নিয়ে যায়। আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে তারা। আমি ওইদিন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম আতংক কী? নিজের প্রাণের মায়াটা কী। বহুবছর পর আমি যখন কুতুপালং ক্যাম্পে যুবক ও বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন অনুভব করলাম অপহরণের পর নিজের অসহায় অনুভূতিটা। মনে হলো, এই মানুষগুলি প্রতিদিনই সেই অনুভূতি নিয়ে বেঁচে আছে। তাদের আসলে সত্যিকারের বাঁচানো দরকার।

এদিকে ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, ‘এটা সত্যিই আমাদের জন্য সম্মান ও গর্বের ব্যাপার যে, তাহসান বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর শুভেচ্ছাদূত হতে সম্মত হয়েছেন। তিনি শুধু একজন মেধাবী সংগীতশিল্পী ও অভিনেতাই নন, তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত একজন অসাধারণ মানুষ। যিনি বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে বেশ জনপ্রিয় ও সমাদৃত। আমি নিশ্চিত, তাহসান শরণার্থীদের অধিকার, কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য এক নতুন কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করবেন।’

ইউএনএইচসিআর সারাবিশ্বের শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, জীবন-রক্ষাকারী সহায়তা দেয় আর সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করে।

বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর কাজ শুরু হয় ১৯৭১ সালে শরণার্থী বাংলাদেশীদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে। চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সংস্থাটির বাংলাদেশের কার্যক্রম এখনও বিদ্যমান।

পাঠকের মতামত: