কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মোকাবেলায় জনবল চায় জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশে নিজেদের জনবল আরও বাড়াতে চায় জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৩ জনের তালিকা পাঠিয়েছে সংস্থাটি। তবে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত এমন ১৯ জনকে আনার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে তালিকার সবাইকে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে নানা ধরনের চাপে রেখেছে জাতিসংঘ। একজন রোহিঙ্গাও আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও করোনা মোকাবিলায় এতো লোকবল আনতে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পগুলোতে এখনও করোনা আক্রান্ত কাউকেই পাওয়া যায়নি। কিন্তু যাতে ওখানে অসুখটা (করোনাভাইরাস) না যায় কোনো কোনো মহল তার জন্য খুব তৎপর। অনেকেই বহু রকম অ্যাক্টিভিটি (কার্যক্রম) দেখাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনো রকম মহামারি হয়নি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেখানে অধিকতর লোক পাঠাচ্ছে। জাতিসংঘ আমাদেরকে ৬৩ জন লোকের তালিকা দিয়েছে, যাদের তারা চায়। করোনায় আক্রান্ত হলে রোহিঙ্গাদের মুক্তির জন্য এই লোকগুলোকে এখনই বিদেশ থেকে আনবে।’

ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা ১৯ জনকে আনতে রাজি হয়েছি। তার জন্যে তারা (জাতিসংঘ) খুব পিড়াপীড়ি করছে। অনেক শর্ত দিয়েছে তারা। যাদের মেডিকেল অভিজ্ঞতা নেই, তাদের আনতে আমরা রাজি হয়নি। এটা নিয়ে তারা (জাতিসংঘ) আমাদের একটা চাপের মধ্যে রেখেছে।’

এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে, এরা (জাতিসংঘ) আগেভাগে ইনফেকশন বন্ধের জন্য লোক পাঠাচ্ছে, যদিও একজনও আক্রান্ত হয়নি।

এদিকে নৌপথে রোহিঙ্গা যেগুলো আসতেছে তারা আক্রান্ত হয়ে আসছে কি-না কে জানে! আমরা এদের দূরে ভাসানচরে পাঠিয়েছি। যাতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের থেকে তাদের আলাদা করে রাখা যায়।’

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিজেদের লোক আনতে জাতিসংঘ এতটাই মরিয়া যে করোনা মহামারির কারণে সব ফ্লাইট বর্তমানে স্থগিত থাকলেও, ফ্লাইট চার্টার করে তাদের নিয়ে আসতে চায়।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এই ৬৩ জনকে আনার উদ্দেশ্য করোনা মোকাবিলায় বলা হলেও, চিকিৎসা সেবায় কোনো অভিজ্ঞতা নেই এমন লোক আনার যুক্তি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) টাকা ঠিকমতো জোগাড় করা যায়নি। এদিকে আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে প্রস্তুতিও এখনো ঠিকমতো সম্পন্ন করা যায়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ফান্ড সংকটও রয়েছে। সেখানে ফ্লাইট চার্টার করে জনবল নিয়ে নিতান্তই বিলাসিতা মনে করে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতিসংঘ নিজেদের লোকজনের পেছনে কত এবং রোহিঙ্গাদের পিছে কতটুকু খরচ করছে, তার হিসাব প্রকাশ করা উচিত। পুরো প্রক্রিয়াটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেখানকার স্থানীয় জনগণ।

জাতিসংঘ প্রায়ই বলে থাকে, স্থানীয়দের সহায়তা করে যাচ্ছে তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের পিছে জনপ্রতি কত টাকা খরচ করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব বাংলাদেশকে দেয়া হয়নি। অথচ অতিরিক্ত জনবলে মনোযোগ দিয়ে যাচ্ছে তারা।

এদিকে জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে বসবাস করায় এবং অপ্রতুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ ভাইরাসটিতে দ্রুত সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মাধ্যমে এখন পর্যন্ত একজনেরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) নিদের্শনা অনুযায়ী, ক্যাম্প গুলোতে শুধুমাত্র অতি জরুরি পরিষেবা অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য এবং রান্নার জ্বালানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যবিধি প্রচারণা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কার্যক্রমসহ নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আলাদা করে রাখার মত সেবাগুলোই বর্তমানে ক্যাম্পে চালু রয়েছে। ক্যাম্পে যাতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য সহায়তা কার্যক্রমকে সীমিত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: