কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা গণহত্যা: জান্তার পক্ষে আদালতে মামলা লড়বেন ‘নিষিদ্ধ’ কর্মকর্তারা

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার আদালত-আইসিজে’তে দ্বিতীয় পর্বের শুনানি শুরু হচ্ছে সোমবার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই মামলার প্রথম পর্বের শুনানি শেষে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছিলো আদালত। এবার শুনানি হবে আদালতের বিচারিক এখতিয়ারসহ মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তিগুলো নিয়ে।

প্রথম পর্বের শুনানিতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি।

গত বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সু চিকে কারাগারে পাঠায়। তাই এবার সামরিক জান্তা সরকারের মনোনীত সদস্যরাই অংশ নিচ্ছেন শুনানিতে। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কর্মকর্তাও আছে।
গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞার তালিকা ঘেঁটে তেমন তথ্যই মিলছে।

মামলায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা আটজনের অন্তত চারজনের ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।
এই দলের প্রধানের ভার পেয়েছেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মং লুইন। ইইউ গত বছর এপ্রিলে, যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আরেক সদস্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা-বিষয়ক মন্ত্রী কো কো হ্লাইং, পরিকল্পনা, অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী উইন শেইন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল থিডার ওপরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নিষেধাজ্ঞা আছে।

আইনি দলের বাকি সদস্য মিয়ানমারের লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ার পায়ে, অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মিয়ো জাও থেইন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিয়াও মিয়ো টুট এবং আইন বিশেষজ্ঞ খিন ও হ্লাইংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা সে ব্যাপারটি নিশ্চিত নয়।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় থাকারা কিভাবে নেদারল্যান্ডসের হেগে আসবেন, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে এবারের করোনা পরিস্থিতির কারণে শুনানি হবে যৌথ কাঠামোয়। কিছু সদস্য আদালতে উপস্থিত থাকবেন, বাকিরা যুক্ত হবে ভিডিও কনফারেন্সে।

আইসিজে বলেছে, মামলা বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি নিয়েই এবার শুনানি, বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যায় মিয়ানমার নিজেদের আপত্তির পক্ষে মৌখিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে।

এক দিন বিরতি দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গাম্বিয়া যুক্তি উপস্থাপন করবে। দ্বিতীয় ধাপে শুক্রবার রাতে মিয়ানমার এবং রোববার রাতে গাম্বিয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে।
এদিকে জান্তা ও সু চিপন্থীদের স্বীকৃতির লড়াইও চলছে। সু চিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উত্খাতের পর সরকারের আদলে ‘রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিল’ গঠন করে সামরিক জান্তারা। এখন পর্যন্ত কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদও সেনাবাহিনীর এই কাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মনোনীত প্রতিনিধিকেও স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করেনি জাতিসংঘ।

মিয়ানমারের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী কর্তৃপক্ষ কে—তা নিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গনে জান্তা নেতৃত্বাধীন ‘রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিল’ ও অং সান সু চিপন্থী জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজে) মধ্যে কূটনৈতিক লড়াই চলছে। এর মধ্যে আগামীকাল এই শুনানি শুরু হচ্ছে। এনইউজে নিজেদের মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করে আইসিজেতে আবেদন করলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত আদালত তাতে আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি।

অনেকেই আইসিজেতে জান্তাদের এই উপস্থিতিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জান্তাদের স্বীকৃতি পাওয়ার পথটা সহজ হয়ে যাবে। তাই অনেকে জান্তাদের শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধ তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত সাবেক স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী কমিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিডোটি গতকাল এক পডকাস্ট বার্তায় বলেছেন, ‘জান্তা মিয়ানমারের সরকার নয়। দেশে ও বিদেশে মিয়ানমারের সরকার হিসেবে কাজ করার কর্তৃত্ব বা সামর্থ্য কোনোটিই জান্তার নেই। ’

বাংলাদেশও এই মামলার দিকে চেয়ে আছে। মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। আইসিজেতে গণহত্যার মামলা করা এবং মামলা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগে গাম্বিয়ার পাশে আছে বাংলাদেশ।

সূত্র: কালের কণ্ঠ।

পাঠকের মতামত: