কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর টাকার উৎস ইয়াবা ও সোনার ব্যবসা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ। এর আগেও উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত, গোলাগুলিতে খুন হয়েছেন বহু রোহিঙ্গা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, নারী শিশু পাচার, ইয়াবা ও স্বর্ণের ব্যবসাও রমরমা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আশ্রয়শিবিরগুলো থাকে অরক্ষিত, আতঙ্কে রাত কাটান সাধারণ রোহিঙ্গারা।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, স্থানীয় জনগণের অভিমতসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি উখিয়া উপজেলার ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিশ্বের বৃহৎ কুতুপালং আশ্রয়শিবিরটি গড়ে উঠেছে রাজাপালং ইউনিয়নের কাছেই। যেখানে ঠাঁই হয়েছে অন্তত ৯ লাখ রোহিঙ্গার।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন কেমন?

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন আছে, বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে—যারা জঙ্গির মানসিকতা নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, অস্ত্রবাজি করছে। ক্যাম্পে এখন থমথমে পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। আর্মড পুলিশ এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী তৎপর থাকলেও ভেতরের পরিস্থিতি কিন্তু থমথমে। আমরা যারা স্থানীয় জনগণ রয়েছি, ক্যাম্প এরিয়ার বাইরে চারপাশে, আমরাও শঙ্কিত। রোহিঙ্গারা এখন ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসা, আল ইয়াকিনসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন আছে। নিজেদের মধ্যে যে অন্তঃকোন্দল, গোলাগুলির যে আওয়াজ, এ নিয়ে বাংলাদেশিরা শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। পরশু দিন আমরা গোলাগুলির আওয়াজ পেয়েছি, ক্যাম্পের এক কিলোমিটারের ভেতরে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য সেখানকার রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের লোকজন এই গোলাগুলি করছে।

মুহিবুল্লাকে আপনি কীভাবে দেখেন? তাঁকে কারা হত্যা করল?

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী: আসলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আমাদের অবাধে আসা-যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্যাম্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যতটুকু জানি, মুহিবুল্লাহ ভালো মানুষ ছিলেন, বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলে তৎপর ছিলেন। রোহিঙ্গাদের স্বার্থে কাজ করছিলেন। তাঁর চিন্তা ছিল, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা সময় মুহিবুল্লাহ আরাকানে (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) ফিরতেন এবং সেখানে স্বাধীন একটা মুসলিম আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন হয়তো তাঁর মধ্যে ছিল।

গত সপ্তাহে আমেরিকা থেকে ক্যাম্পে এসে মুহিবুল্লাহ সফরের বিস্তারিত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করার ইঙ্গিতও তিনি তখন দিয়েছিলেন। হয়তো এটাই তাঁর (মুহিবুল্লাহর) জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক, সেটা যারা চাইছে না, এখানে থেকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাবে, মাদকের ব্যবসা করবে, সোনার ব্যবসা করবে, তারাই মুহিবুল্লাকে হত্যা করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী যে সংগঠনগুলো আছে, তাদের মাধ্যমে মুহিবুল্লাহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো সেখানে এনজিও, আইএনজিওরাও জড়িত থাকতে পারে। যেহেতু রোহিঙ্গা নিয়ে বিশাল ব্যবসার নেটওয়ার্ক, মানবতার সেবার নাম দিয়ে কত কিছু হচ্ছে সেখানে।

পাঠকের মতামত: