কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লিয়াকতের বিরুদ্ধে মামলা, বাবুলকে আমলে নেননি আদালত

কক্সবাজার জেলার টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যামামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলির বিরুদ্ধে ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে’ অর্থ আদায়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।

বুধবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে নালিশি অভিযোগটি করেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন। এতে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

লিয়াকতসহ নয় ‍পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি অভিযোগটি করেছেন চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ী। একই মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ আরও ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হলেও আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেননি।

বুধবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়ে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণের আবেদন করেন বাদী। কিন্তু আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী এস এম জসিম উদ্দিন নগরীর পতেঙ্গা থানার নাছিরনগর এলাকার বাসিন্দা নেকবার হোসেনের ছেলে। তার আইনজীবী জুয়েল দাশ এসব তথ্য জানান।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক এসআই লিয়াকত আলী এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাবেক এসআই নজরুল ও হান্নান। এছাড়া এস এম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান নামে আরও চার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে লিয়াকত আলী কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান ‘হত্যা’য় জড়িয়ে সম্প্রতি বরখাস্ত হয়েছেন।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত আমলে নেননি তারা হলেন— ডিবির সাবেক এসআই সন্তোষ কুমার, পতেঙ্গা থানার সাবেক এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার সাবেক এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে নগরীর খুলশী থানার ওসি) প্রনব চৌধুরী, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি) মর্জিনা বেগম এবং ডিবি’র সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়া) বাবুল আক্তার।

অভিযোগকারী জসিম উদ্দীন (৫৫) নগরীর পতেঙ্গা চরপাড়া মোড় এলাকার মৃত নেকবর আলী সিকদারের ছেলে। নগরীর সাগরিকা বিসিক এলাকায় তার সূচনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।

জসিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা প্রতিষ্ঠানে চুরি ও লুঠতরাজের ঘটনায় একটি মামলা করেছিলাম। সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ছিলেন লিয়াকত আলি। ওই মামলার তদন্তের জন্য আমার কাছ থেকে এসআই লিয়াকত ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল।

“মামলাটির জন্য ২০১৪ সালের ১৪ জুন সকালে আমাকে ডিবি অফিসে ডাকা হয়। সেখানে গেলে আপস করার প্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় উল্টো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তাতেও রাজি না হওয়ায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে।”

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জসিম উদ্দীন বলেন, “এরপর পতেঙ্গা থানায় নিয়ে আমাকে আটকে রাখে। দাউদকান্দি থানার একটি নারী নির্যাতন মামলার ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে আটকে রাখা হয়। আমার ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী সাহাবুদ্দীনের খালাত বোন সেই মামলার বাদী।

“পতেঙ্গা থানার ওসি যাচাই করে জানতে পারেন যে ওই মামলায় আমার নামে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। বিকেল ৪টায় থানার কম্পাউন্ড থেকেই এসআই লিয়াকত আমাকে আবার আটক করে। তখন বলে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে দিবে।”

‘প্রাণভয়ে’ দুই লাখ টাকা দেন দাবি করে জসিম বলেন, “টাকা দেওয়ার পরেও আমাকে ছাড়ে নাই। সদরঘাট থানায় সাহাবুদ্দীন একটি চাঁদাবাজির মামলা করে। সেটাতে আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সদরঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

“সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করে পরদিন আদালতে হাজির করা হয়। এরপর একদিন রিমান্ডেও নেয়। ১৯ দিন জেল খেটে জামিনে বের হই।”

জসিম উদ্দীন জানান, নিজের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে তার করা চুরির মামলাটিতে ডিবি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে তিনি নারাজি আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেয়। পরে চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করা হয়। সেই চারজনকে বুধবার করা নালিশি অভিযোগে আসামি করেছেন জসিম ‍উদ্দীন।

তিনি বলেন, “দাউদকান্দি থানার মামলায় ভুয়া ওয়ারেন্টে আমাকে আসামি দেখানোর ঘটনায় সেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। এতে প্রমাণ হয় তারা আমাকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসিয়েছিল।

পাঠকের মতামত: