কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় বাড়ছে

বদরুল আলম মজুমদার::

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক-পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ মার্চ খুলে দেয়ার যে-ঘোষণা দিয়েছিল সরকার, তা কার্যকর না-ও হতে পারে। দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতে থাকায় এবং কোভিডপ্রতিরোধী গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ওই ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের পর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু কোভিড সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত শুক্রবার বলেছেন, ‘সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পেছাতে পারে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’ এর আগের দিন তিনি বলেছিলেন, ‘১৫-১৬ মার্চ পর্যন্ত দেখব। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটার ওপর বিবেচনা করে একটা ঘোষণা দেব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে।’

এদিকে কোভিড সংক্রমণের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারো কারো মতে, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সীমিত আকারে খোলা যেতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে স্কুল-কলেজ খোলা দরকার, যাতে সংক্রমণ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি না হয়। সরকার যদি যথেষ্ট আস্থাবান হয় যে একেবারে প্রস্তুতি ঠিকমতো নেওয়া হয়েছে, তাহলে স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে।’

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেটুকু দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আরো দুই সপ্তাহ দেখতে হতে পারে। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝা যাবে। তবে সত্যি যদি এ রকম বাড়তে থাকে, তাহলে তো আশঙ্কার কথা।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন তো সংক্রমণের হার ২ শতাংশের মাঝামাঝি ছিল। এখন তো আবার বাড়ছে। ফলে খুলতে হলে সবকিছুর একটা সমন্বয় আনতে হবে। এখন খুলতে হলে সবাইকে নিয়ে মিটিং করতে হবে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এখনো ৩১ মার্চ আসতে তিন সপ্তাহের মতো সময় আছে। সংক্রমণ কোনপর্যায়ে যায় সেটাও বোঝা যাবে।’

এই বিশেষজ্ঞের মতে, সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে টানা কয়েক মাস থাকলে স্কুল-কলেজ খোলার কথা বলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে আবার বেড়ে গেছে। শিক্ষক ও ১৮ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকাও নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিপ্তরের পরিচালক প্রফেসর বেলাল আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। শিক্ষকদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রমও চলছে দ্রুত গতিতে। তবে স্কুল-কলেজ খুললে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় কথা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা আমাদের জানিয়েছেন। এ উদ্বেগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।’

দেশে কোভিড সংক্রমণ কমে আসায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

পাঠকের মতামত: