কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘শুকতারা’ সব চোখে দেখে না: আলমগীর মাহমুদ

আলমগীর মাহমুদ::

রামু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোশতাক স্যার মায়ার বাঁধন ছিন্ন করলেন, ধরায় হলেন অধরা, অদেখা, অদৃশ্য। পরকালের বাসিন্দা বনা এমন মানুষটির জান্নাত কামনায় রইলাম….

১৯৬২ ইং শেষের দিকে ছয়জন অধ্যাপক নিয়ে কক্সবাজার কলেজের যাত্রা শুরু। এই ছয়জনের একজন মোস্তাক স্যার।

(‘বেলাভূমি’– ৯৪ কক্সবাজার কলেজ প্রকাশনা। অধ্যক্ষ জানে আলম স্যারের লেখা পৃঃ- ৩৩)

উনি কূঁড়েঘরে এম, পি ইলেকশন করেন। ন্যাপ করতেন। বাম ধারার রাজনীতির পুরোধা ছিলেন প্রথম জীবনে। হুলিয়া মাথায় আত্নগোপনের সময় উনি উখিয়ায় কাঁটিয়েছিলেন গোপনের সিংহভাগ সময় ।

উখিয়ার মানুষের ভালবাসায় মুদ্ধ ছিলেন। বেশ সন্মান দিতেন উখিয়াবাসীকে।গল্পেরছলে উখিয়ার সে অতীতের স্মৃতি মন্থন করতেন আলাপে।

উখিয়া কলেজের কমিটি, ভোট, নিয়োগ বিভিন্ন বিধি সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা দলবলে উনার রামু বাড়িতে হাজিরা দিয়েছি পরামর্শের প্রয়োজনে। উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানুয়েল এবং বিধি সংক্রান্ত বিষয়ে একমাত্র পরামর্শদাতা।

তৎসময়ে বঙ্গমাতার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হামিদুল হক চৌধুরী (বর্তমানে উখিয়া উপজেলা চ্যায়ারম্যান) কলেজটি প্রতিষ্ঠা হবে হবে এমন সময় আমাকে সহ খুব ভোরে উনার রামু তেমুহনীর বাড়িতে হাজির। খুব গোপনে। কারন তখন আমি উখিয়া কলেজের শিক্ষক হয়ে এমন সহমর্মিতা আত্নহনন ভেবে আঁড়চোখে দেখা হতো।

মোস্তাক স্যারের বাড়ির দরজায়। খোলার আহবানে কড়া নাড়াবো নাড়বো..ঠিক তখনই হামিদমামা কয় ” আলমগীর এত জানা মানুষের সামনে তুমি আমারে অধ্যক্ষ বলে পরিচয় করবা না। উনার ম্যানুয়েল সংক্রান্ত বা অন্য কোন কথনে যদি আমারে কম জানা মনে করে লজ্জা পাবো।আজও কথাটি আমার কানে বাঁজে।

উখিয়া উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অদৃশ্য মেধার যোগানকারী কলমী হরফে না উঠা মানুষটি এই মোস্তাক স্যার। আমি নিজে দেখা সে পরিক্রমার রাজসাক্ষী।

কক্সবাজার জেলায় আরো কত পরামর্শ উপকারভোগী ফলভোগী আছি, চাওর কলমী হরফে আমরা যে তারটা করি না, করার অভ্যাস নাই বলে জ্ঞানী সাম্রাজ্যে শিক্ষাবিস্তারে উনার অবদান কতটুক সঠিক পরিমাপ নজরদারীতে অসম্ভব, অদৃশ্য।

ইংরেজি সাহিত্যে এম,এ করা অনন্য মেধার মানুষ। স্মরণ শক্তি ছিল উদাহরণের মতো ১৯৬০ সালে আত্নস্থ করা ইংরেজি কবিতা ২০০৫-৬ সালেও ঘড় ঘড় করে বলে তর্জমার বাজিমাতে জমিয়ে রাখাতেন আসর।

যখনই উনার সান্নিধ্যে রামু যাওয়া হতো, মৃদু হেসে কইতেন “আলমগীর ক ন জাগাত ন বাজিলে আঁ্রে রে চাইত নো আইয়ে আ… আইয় বইয় চাই!( কোন বিপদে না পড়লে আলমগীর আমারে দেখতে আসে না, আস বস)

মনোবিজ্ঞানীর মত মনের চাওয়া বুঝতেন মানুষের।উনার মত লানিং হেভিটওয়ালা মানুষের দেখা কক্সবাজারের মাটিতে হাঁটা দ্বিতীয়জন কবে দেখা মিলবে আল্লাহ মালুম।

সব সময় উনার সাথী ছিলেন কাল একটা বইয়ের ব্যাগ। ব্যাগ ভর্তি থাকতো বই। এমন কোন জ্ঞানের স্তর নেই যেখানে মোস্তাক স্যার বিচরণ করেননি।

উনাকে বলতে শুনেছি ফিজিক্স কেমেষ্ট্রি যে পড়েনি সে কেমনে বুঝবে সুরা ওয়াক্কিয়াহ’র ৭৫ নং আয়াতের সঠিক মর্ম! সাথে সাথে ৭৫ নং আয়াতের অন্তরনিহিত মর্ম বর্ণনায় রইলেন আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁকিয়ে রইলাম..

সাওদাগর, কোম্পানী, বহদ্দারের ফ্ল্যাগ উড়ানো এই শহরে উনিছিলেন শিক্ষাসমজদারদের মনের গোলায় বর্ষাযাপনের মজুত সরবরাহের একমাত্র বাতিঘর… সে বাতিঘরটিও নিভে গেল আজ ..!

লেখকঃ আলমগীর মাহমুদ

বিভাগীয় প্রধান সমাজবিজ্ঞান, উখিয়া কলেজ, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: