কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

শুভ বড়দিন, সম্প্রীতির বন্ধনে কাটুক সংকট

 

আজ শুভ বড়দিন। এ বছর এমন সময়ে এই ধর্মীয় উৎসব পালিত হচ্ছে, যখন বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দুর্যোগের ছায়া ফেলছে। বস্তুত গত প্রায় দুই বছর ধরে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ধরনের উৎসবেই প্রভাব বিস্তার করেছে করোনাভাইরাস। এবারও বিশ্বব্যাপী বড়দিনের উৎসবে রয়েছে বিধিনিষেধ। স্বল্প পরিসরে সংক্ষিপ্ত উৎসব আয়োজিত হলেও আনন্দে ঘাটতি পড়বে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরকীর্তন, বড়দিনের উপাসনা, কেক কাটা, পিঠা পর্ব ও প্রীতিভোজের আয়োজনও চলবে।

দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই দিনে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু জেরুজালেমের কাছে বেথলেহেমে জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিষ্টধর্মের মতে- হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার-পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। শাসকের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত-বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ওই সময়ের শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তাকে জীবন দিতে হয়েছিল ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। মানব জাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে। আমরা মনে করি, সত্য ও ন্যায়ের যে দিশা তিনি দেখিয়েছেন, তা চিরন্তন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার শিক্ষা আমাদের জন্য প্রেরণার। জাতি হিসেবে বাঙালি শান্তিপ্রবণ। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এ দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন।
মুসলমানদের কাছে তিনি ঈসা (আ.) হিসেবে পরিচিত এবং তার পর নাজিলকৃত গ্রন্থ ইঞ্জিলও মুসলিম বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে মুসলমান সমাজ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ঐক্য ও সম্প্রীতির বিশেষ সদ্ভাব বজায় রেখে চলেছে। দেশের সেবাধর্মী ও উন্নয়নমূলক কাজেও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভূমিকা রাখছে। বস্তুত প্রতি বছর বড়দিন সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যে বিশেষ বাণী দেন, তাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা জাতিরই শুভেচ্ছা প্রতিফলিত। এ উপলক্ষে স্বল্প পরিসরে হলেও সারাদেশে খ্রিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যে বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়, সেটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।

 

আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যে দেশ সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে, সেই দেশ হবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি-এটিই স্বাভাবিক। বড়দিনটি বছরের প্রায় শেষ পর্যায়ে পালিত হয়। এ বছরটির উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে জাতি হিসেবে আমরা করোনার প্রভাব মোকাবিলা করেছি। সরকার সব নাগরিকের জন্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করেছে। এটা স্বস্তির, ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকার আওতায় এসেছে। দুর্যোগের এ সময়ে অনেক পরিবারেরই আয় কমেছে। তারপরও উৎসব পালিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের জন্য কাজ করলে এ দুঃসময় পার করে ভবিষ্যতে আরও আনন্দঘন উৎসব পালন করতে সক্ষম হবো।

যিশু মানবসেবার অন্যতম আদর্শ। তার পথ ছিল সংযম, সহিষুষ্ণতা ও ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারাবিশ্বে আজ হিংসা-হানাহানি-অশান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি দুর্যোগ গ্রাস করছে পৃথিবীকে। জীবনযাপনে পরিমিতিবোধ, পরিবেশ সুরক্ষায় সচেষ্ট থাকা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হিংসা-বিদ্বেষের সহিষুষ্ণতা যিশুর শিক্ষা। প্রতিটি ধর্মের মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তার মূলেও রয়েছে মানবতা। মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরস্পরের সহায়তায় এগিয়ে আসার মাধ্যমে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হোক। আমরা প্রত্যাশা করি, সবার যূথবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবী সব ধরনের সংকট থেকে মুক্ত হবে। বড়দিন প্রত্যেক মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক- এও আমাদের কাম্য।

পাঠকের মতামত: