কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় শিল্পী প্রবীর বড়ুয়া’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন

ফুলেল শ্রদ্ধা, ভালবাসা, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও অনিত্য সভার মাধ্যমে কক্সবাজারের প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিল্পী প্রবীর বড়ুয়া’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার প্রাঙ্গনে অনিত্য ও ধর্মীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন, ভারতীয় ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ধর্মরতœ মহাথের।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনিত্য সভায় স্মৃতিচারণ করেন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, ভাইস চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, পর্যটন মোটেল শৈবালের ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, রামু বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়–য়া, বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারের সংগীত প্রযোজক শিল্পী বশিরুল ইসলাম, হাকিম-রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অব.) কিশোর বড়–য়া, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামুর সভাপতি নাট্যকার মাষ্টার মো. আলম, রামু ব্রাদ্রার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পলক বড়–য়া আপ্পু, রামু প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনীল বড়–য়া প্রমুখ। অনিত্য সভা শেষে প্রয়াত শিল্পী প্রবীর বড়–য়াকে ধর্মদান করেন, প্রয়াতের ভাইপো, রামু শান্তির দুত বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ ক্ষান্তিপাঞা ভিক্ষুসহ শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু। পরে তাঁকে রামু জাদি পাড়াস্থ কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ শ্বশানে সমাহিত করা হয়।
কক্সবাজারের বরেণ্য সংগীত শিল্পী প্রবীর বড়–য়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

প্রয়াত সংগীত শিল্পী প্রবীর বড়ুয়া কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া গ্রামের বড়ুয়া পাড়ার ঐতিহ্যবাহী টুনি পরিবারের প্রয়াত উমেশ চন্দ্র বড়ুয়া মহাজন ও প্রয়াত চারুবালা বড়ুয়ার চতুর্থ ছেলে। রামু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুবীর বড়ুয়া বুলু ও প্রয়াত সাংবাদিক আবীর বড়ুয়া’র বড় ভাই, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সদস্য বিজন বড়ুয়া ও কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়ুয়া’র মামা। তিনি কয়েক বছর ধরে স্বপরিবারে কক্সবাজার পৌরসভার মোজাহের পাড়ায় বসবাস করতেন।
এদিকে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও সাবেক পর্যটন কর্মকর্তা প্রবীর বড়ুয়া’র মৃত্যুর খবর পেয়ে, ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ছুটে যান কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। এমপি কমল প্রয়াত শিল্পীর মরদেহের পাশে কিছুক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাতে শিল্পী প্রবীর বড়–য়ার মরদেহবাহী গাড়ি রামুতে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। বৃহষ্পতিবার ভোর থেকে কক্সবাজার রামুর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গুণী শিল্পী প্রয়াত প্রবীর বড়–য়ার প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শিল্পী প্রবীর বড়ুয়া রামু বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদের সভাপতি, রামু মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, রামু উপজেলা বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের আলোচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রামু দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠী’, রামু সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, রামু শিল্পকলা একাডেমী, শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমী, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। আজীবন সঙ্গীতের জন্য কাজ করে গেছেন প্রয়াত এই গুনী শিল্পী।

সঙ্গীতগুরু প্রবীর বড়ুয়া সত্তর দশকে ঢাকা মিউজিক কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব মিউজিক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সংগীত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বহুবার পদক সহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। অন্যদিকে সংগীত শিল্পী প্রবীর বড়–য়ার মৃত্যুতে রামুসহ কক্সবাজার জেলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পাঠকের মতামত: