কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সব সূর্য গ্রহন এক নয় , জানুন পার্থক্য

 

আজ ২৫ অক্টোবর বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। শুধু আমাদের দেশেই নয় এই গ্রহণ দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। মূলত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে দেখা যাবে এই বিশেষ সূর্যগ্রহণ।

আংশিক সূর্যগ্রহণ মূলত, তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে সম্পন্ন হবে। তা হলো প্রাথমিক সময়, চরম সময় ও সমাপ্তির সময়। এমনটি জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু মহাশাখা সূত্রে জানা গেছে, সূর্যগ্রহণ ঢাকা বিভাগে বিকেল ৪টা ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ২৪ মিনিট ১২ সেকেন্ডে শেষ হবে। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় কতটুকু দেখতে পাওয়া যাবে সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা।

তবে মহাজগতে অনেক ধরনের গ্রহণ হয়। সাধারণত আমরা দুই ধরনের গ্রহণের কথা জানি, চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ। এর মধ্যে তৃতীয় আরেক ধরনের গ্রহণ আছে যেটি ঘটে অনেক দূরের দুটি তারার মধ্যে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হুয়ান কার্লোস বিমিনের লেখা ইলাস্ট্রেটেড অ্যাস্ট্রোনমি বইটিতে এই তথ্য পাওয়া যায়। তবে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গ্রহণ আছে।

সূর্যগ্রহণ হয় মূলত চাঁদ যখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘোরে, তখন তার প্রদক্ষিণ পথে কখনো কখনো চাঁদ এসে পড়ে সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝখানে। তখন তারা থেকে আলোর বিচ্ছুরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। চাঁদ এই সময় পৃথিবীকে তার ছায়ায় ঢেকে ফেলে।

সূর্যগ্রহণ হয় তিন ধরনের। আর এই ধরগুলো নির্ভর করে চাঁদ সূর্যকে কতটা ঢেকে ফেলছে তার ওপর। চলুন জেনে নেওয়া যাক তিন ধরনের সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে-

পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহন:

সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ ঘটে যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ এমন অবস্থানে আসে যখন চাঁদ সূর্যের আলোকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য আবার কখনো কখনো কয়েক মিনিটের জন্য আকাশ এতই অন্ধকার হয়ে যায় যে মনে হয় সেটা রাতের আকাশ।

নাসার তথ্য মতে, মহাজাগতিক একটা সমন্বয় ঘটলেই একমাত্র সূর্যের পূর্ণগ্রহণ সম্ভব হয়। সূর্য চাঁদের তুলনায় ৪০০ গুণ চওড়া এবং চাঁদ পৃথিবী থেকে যত দূরে, সূর্য তার চেয়ে আরও ৪০০ গুণ বেশি দূরে। এই ভৌগলিক অবস্থানের অর্থ হলো চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই লাইনে একেবারে সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছায়, তখন সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হয়।

পৃথিবী পৃষ্ঠে যে লাইন বরাবর চাঁদের ছায়া পড়ে তাকে বলা হয় ‘পূর্ণ গ্রাসের পথ’। আর এই ছোট পথের মধ্যেই পুরো অন্ধকার নেমে আসার চোখ ধাঁধানো প্রক্রিয়াটি দেখা যায়। যে অংশে আলোর উৎস পুরো ঢেকে যায়, ছায়ার সেই ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে লাতিন ভাষায় বলে ‘আমব্রা’। এই পথের দুপাশে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রহণ দেখা যায় আংশিকভাবে।

গ্রহণ কতক্ষণ থাকবে সেটা নির্ভর করে, সূর্য থেকে পৃথিবীর অবস্থান, পৃথিবী থেকে চাঁদের অবস্থান আর পৃথিবীর কোন অংশ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে তার ওপর। সূর্যের গ্রহণ সর্বোচ্চ ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, বলে জানা যায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী হুয়ান কার্লোস বিমিনের লেখা বইতে। তবে একই জায়গা থেকে ৩৭৫ বছরে একবার সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে পাওয়া।

বলয়গ্রাস গ্রহণ:

বলয়গ্রাস গ্রহণ হয় যখন চাঁদ সূর্যকে এমনভাবে ঢাকে যে তার বহিঃসীমাটুকু শুধু পৃথিবী থেকে দেখা যায়। দেখে মনে হয় ঠিক যেন আলোর আংটি। চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ছোট দেখায়, তখন ছোট চাঁদ বড় সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢাকতে পারে না। ফলে সূর্যের ঢাকা না পড়া বহিঃসীমাকে একটা বলয় বা আংটির মত দেখা যায়- মাঝখানে অন্ধকার আর চারপাশে আলোর বলয়। একেই বলে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ।

সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণের মতই বলয়গ্রাসের সময়ও একটা ছায়া ফেলা পথ তৈরি হয়। এই পথের মধ্যে পৃথিবীর যেসব অঞ্চল সেখান থেকে বলয়গ্রাস গ্রহণ দেখা যায়। একইভাবে পথের দুপাশ থাকে আরও বেশি আলোকিত।

নাসার তথ্য মতে, বলয়গ্রাস সাধারণত সবচেয়ে বেশি সময় স্থায়ী হয়। আংটির মত আলোর বলয় দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দেখা যেতে পারে। তবে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের বেশি বলয়গ্রাস স্থায়ী হয় না। এরপর সূর্যের বলয়গ্রাস গ্রহণ হবে ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর, যা দেখা যাবে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু কিছু জায়গা থেকে।

মিশ্র গ্রহণ:

২০১৩ সালের নভেম্বরে একটা অভিনব মিশ্র প্রকৃতির গ্রহণ হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হুয়ান কার্লোস বিমিন মিশ্র গ্রহণের ব্যাখ্যা করেছেন তার বইতে। তিনি বলেছেন, মিশ্র গ্রহণ এমন একটা প্রক্রিয়া যেটা ঘটে যখন চাঁদ এমন একটা দূরত্বে আসে যেখান থেকে সে সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলতে পারে। কিন্তু প্রদক্ষিণ পথে ক্রমশ চাঁদ পৃথিবী থেকে সামান্য সরে যায় এবং সূর্যকে পুরো ঢাকতে পারে না, ফলে পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দিয়ে শুরু হলেও সেটা বলয়গ্রাস গ্রহণে রূপ নেয়। আবার অনেক সময় সেটা শুরু হয় বলয়গ্রাস গ্রহণ দিয়ে, তারপর চাঁদ আরেকটু কাছে সরে গেলে পূর্ণগ্রাস হয়ে যায়।

মিশ্র গ্রহণ বা হাইব্রিড এক্লিপ্স খুবই বিরল বলে জানাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা আইএসি। তারা বলছেন সব সূর্যগ্রহণের মাত্র ৪ শতাংশ হয় মিশ্র ধরনের। নাসার তথ্য মতে, এ ধরনের মিশ্র গ্রহণ হয়েছিল ২০১৩ সালে এবং পরবর্তী মিশ্র গ্রহণ হবে ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল। যেটা দেখা যাবে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া আর পাপুয়া নিউ গিনি থেকে।

সুত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত: