কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের নির্দেশনা মানছে না বেসরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলো

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-এর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সিলিন্ডারের দাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। সরকারিভাবে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারে দামও উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে সরকারের জ্বালানি বিভাগের এই নির্দেশনা মানতে নারাজ বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলো।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারে দাম উল্লেখ করে দিতে। কিন্তু উদ্যোক্তারা এতে রাজি হচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম কত, সেটি সবাই জানে। এছাড়া পরিবহন খরচ কত হয়, সেটাও বের করা যায়। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা এক সিলিন্ডার এলপিজিতে কী পরিমাণ লাভ করছেন, তা একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। এখানে উদ্যোক্তা কতদূরের ডিলারের কাছে বিক্রি করছেন, আবার সেই এলপিজি ডিলার কত দামে গ্রাহকের কাছে তা বিক্রি করবেন, তা জানা না থাকায় গ্রাহকরা ঠকছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোড়কজাত সব ধরনের পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকলেও ব্যতিক্রম কেবল এলপি গ্যাস।

দাম লিখতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনীহার কারণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘উদ্যোক্তারা বলছেন, এতদিন তাদের একেবারেই ব্যবসা হয়নি।  তাদের বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয়। সঙ্গত কারণে তারা সরকারের কঠোরতা মানতে রাজি নয় বলে আমাদের মনে হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনে এলপি গ্যাসের দামের বিষয়ে আলোচনা উঠলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জনান, ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর মালিকানাধীন সিলিন্ডারের গায়ে গ্যাসের খুচরা দাম ২০১২ সাল থেকেই লেখা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি মালিকানাধীন সিলিন্ডারের গায়ে গ্যাসের দাম এখনও লেখা হয় না। তবে বিষয়টি বাস্তবায়ন করার জন্য বেসরাকরি এলপিজি বোতলজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের কয়েক দফায় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার এলপিজি ব্যবসায়ীদের সবসময় নানা সুবিধা দেয়। তবে দামের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি)-কে অনেকবার বলা হলেও কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘নানা উদ্যোগের কথা মুখে মুখে শোনা গেলেও বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।

জানা যায়,  দেশে এখন বছরে এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এরমধ্যে বিপিসি সরবরাহ করে মাত্র ১৬ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৯ সাল  থেকে সরকার বলে আসছে, বিপিসির মাধ্যমে এলপিজির সরবরাহ বাড়িয়ে গ্রাহক ভোগান্তি দূর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে বিপিসি গত ১০ বছরে কিছুই করতে পারেনি। বরং বিপিসির সরবরাহ করা গ্যাস জেলা পর্যায়ে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের বাসা-বাড়ির রান্নার কাজেই শেষ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর হয় না।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ১২ কেজি ওজনের প্রতিটি সিলিন্ডার এলপি গ্যাসের মূল্য ৭০০ টাকা। ২০০৯ সাল থেকে এই দামেই এলপি গ্যাস বিক্রি করছে তারা। আর বেসরকারি খাতে প্রতিটি সিলিন্ডারের  দাম ডিলার পর্যায়ে ৯৫০ টাকা। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হয়  ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

খোদ রাজধানীতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ না পেয়ে বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করেন অনেকে। বনশ্রীর এফ ব্লকের বাসিন্দা নূরে জান্নাত বলেন, ‘এলপিজি সিলিন্ডারের গায়ে দাম লেখা না থাকার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলো ইচ্ছা মতো দাম নেয়। তার প্রায়ই বলেন, দাম বেড়েছে। বলেই ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি রেখে দেয়। আমরাও বাধ্য হয়ে তা দিচ্ছি। একই অভিযোগ সিলিন্ডার ব্যবহারকারী প্রায় সব গ্রাহকের। তাদের দাবিও একটাই, সিলিণ্ডারের গায়ে দাম লেখা দেখতে চান তারা।

এ বিষয়ে জানতে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)-এর সভাপতি আজম জে চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি কথা বলার আগ্রহ জানিয়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

পাঠকের মতামত: