কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে না উৎপাদনে: কৃষিমন্ত্রী

 

সারের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব ফসল উৎপাদনের ওপর পড়বে না বলে দাবি করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সারের দাম বৃদ্ধি ও মজুতের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘ইউরিয়া সারের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার।

‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। এর ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের ভর্তুকি ছিল মাত্র ১৫ টাকা।’

দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুত আছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। দাম নিয়ে কোনো কারসাজি করলে কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সেই ব্যাপারে আমরা নিবিড়ভাবে মনিটর করছি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

‘আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না; বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে কৃষকের খরচও কমবে। এটি করতে হলে আমাদের কৃষক ভাইসহ সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছি। ডিএপি সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সে জন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে প্রথমে ২৫ টাকা (২০০৯ সালে) এবং পরে ২০১৯ সালে ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে।

‘এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডিএপি ব্যবহার হতো ৮ লাখ টন। বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন। ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ার ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমার কথা, কিন্তু বাস্তবে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমেনি; বরং বেড়েছে। ২০১৯ সালে ইউরিয়া ব্যবহার হতো ২৫ লাখ টন। বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন।’

বিএনপি ও বাম দলগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি সারের দাম বাড়ায় বিএনপিসহ কিছু বাম দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপির সার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ তাদের চরম নির্লজ্জতার প্রমাণ বলে আমি মনে করি। তারা বাস্তব অবস্থা বিবেচনা না করে সমালোচনা করছে। তারা সমালোচনার জন্য সরকারের সমালোচনা করছে।

‘বিএনপির শাসনামলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল। বিএনপি তাদের সময়ে কৃষককে সার দিতে না পেরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল।’

পাঠকের মতামত: