কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিনহা রাশেদ নিহতের এক মাস: আরো ৭ দিন সময় পেল তদন্ত কমিটি

ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার::

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের এক মাস হতে চলেছে। এই ঘটনায় গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আরো সাতদিন সময় পেয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজ সোমবার সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। আশা করি, সাত তারিখের আগেই আমরা রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।’

গত ৪ আগস্ট তদন্ত কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, সিনহা নিহতের ঘটনায় তদন্তে কমিটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৬৭ জনের জবানবন্দি নিতে পেরেছে। টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া সাবেক ওসি প্রদীপ যেহেতু এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট, তাঁর জবানবন্দির অপেক্ষায় ছিল কমিটি। প্রদীপ রিমান্ডে থাকায় তাঁর জবানবন্দি নিতে পারেনি কমিটি। ওই কারণেই তদন্ত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করি, আগামী ২ সেপ্টেম্বর বা পরের দিন ওসি প্রদীপের জবানবন্দি নিতে পারবো। যেহেতু আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর প্রদীপের রিমান্ড শেষ হচ্ছে।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এরপর গত ৬ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত।

এরপর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত গত ২৮ আগস্ট তাদের তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর আজ চতুর্থ দফায় প্রদীপের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য তিনজন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রাজীব। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা ঘটনার দিন তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অন্য তিন আসামি হলেন- পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।

এ ছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত আছেন।

পাঠকের মতামত: