কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিনহা হত্যা মামলা: বিচারকার্যের দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু আজ

সায়ীদ আলমগীর::

আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকার্যের দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ রবিবার থেকে আবারও শুরু হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঘোষিত সময় অনুসারে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় পর্যায়ের এ সাক্ষ্য ও জেরা। জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, গত ২৩ আগস্ট শুরু হয়েছে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম। সাক্ষ্যগ্রহণে আদালতের নির্ধারণ করা প্রথম তিন দিনের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিনের অর্ধেক সময় মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য ও জেরা নেওয়া হয়। পরে শুরু হয় সিনহার সফরসঙ্গী ও হত্যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের সাক্ষ্য। এ দুই জনের সাক্ষ্য ও জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিচারকার্যের নির্ধারিত তিন দিন। ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর চার দিন পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। এই চার দিন বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও জেরা শুরু হবে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সাক্ষ্য ও জেরার সময় ১৫ আসামিকে কাঠগড়ায় উপস্থিত রাখা হবে।

এদিকে প্রথম দুই সাক্ষীর জবানবন্দিতে সিনহা হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন সাক্ষ্যে অংশ নেওয়া আইনজীবীরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সিফাত আদালতকে বলেন, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে লিয়াকত আলীর গুলিতে রাস্তায় ঢলে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। টেকনাফ থানার তত্কালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে লিয়াকত আলীর সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর সিনহার কাছে গিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আপত্তিকর ভাষায় গালমন্দ করেন প্রদীপ। পরে তিনি নিজের পা দিয়ে সিনহার শরীর নড়াচড়া করে দেখেন। তখনো সিনহা জীবিত ছিলেন এবং ‘পানি পানি’ করছিলেন। তখন প্রদীপ সিনহার বুকে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তল্লাশি চৌকির ভেতরে নিয়ে তাকেও (সিফাতকে) মারধর করেন প্রদীপ।

বাদী শারমিন ফেরদৌস আদালতকে বলেন, ফোনে পরিদর্শক লিয়াকত বলেছে, ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি।’ সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং মাথা চেপে ধরেন। এরপর পুলিশ এলে লিয়াকত নির্দেশ দেন আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে, যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, ছবি বা ভিডিও করতে না পারে। আমার ভাইকে হত্যা করার পর ইন্সপেক্টর লিয়াকতের কথোপকথনের একটি অডিওতে বিশ্ববাসী এসব কথোপকথন শোনেছেন। আমি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান। সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়।

পাঠকের মতামত: