কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীতে করোনা রোগী ভর্তির চাপ

১৩ হাসপাতালের ১২টিতেই আইসিইউ সংকট

করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত রাজধানীর ১৩টি সরকারি হাসপাতালের ১২টিতেই আইসিইউ শয্যা সংকট চলছে। এসব হাসপাতালের ৯০ শতাংশ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা শতভাগ পূর্ণ হয়ে গেছে।

করোনা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই ঢাকার সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ সংকট তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীর ৪০টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের ৬৯ শতাংশ আইসিইউ শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৭২ শতাংশের বেশি আইসিইউ শয্যাগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩৪ শতাংশ আইসিইউ শয্যা ফাঁকা আছে।

বিশ্লেষণ বলছে, করোনার উর্ধ্বমূখী সংক্রমণে রোগীর চাপ বাড়ায় হাসাপাতালগুলোতে আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাগুলো ক্রমান্বয়ে ঘাটতির দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে ৬৭ শতাংশ সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন। অন্তত তিনটি হাসপাতালে শতভাগ শয্যা পূর্ণ হয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই শয্যার সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। শয্যার অভাবে হাসপাতালগুলো রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। তাই হাসপাতালগুলোর শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তুতি নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (৬ জুলাই, দুপুর ১২টা অব্দি) তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালের ১৩টিতে আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এসব হাসপাতালে ৩৮৭টি শয্যার মধ্যে এখন ১০৬ ফাঁকা আছে। এরমধ্যে ১২টি হাসপাতালে ১৭৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে মাত্র ১৮টি ফাঁকা আছে।

অন্যদিকে, ২৭টি বেসরকারি হাসপাতালে ৪৫২টি আইসিইউ শয্যার ১৫৬টি ফাঁকা আছে। সব মিলিয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের ৮৩৯টি আইসিইউর বিপরীতে এখন ২৬২টি সিট খালি আছে। আর সর্বমোট ৫৬২৪টি সাধারণ বেডের মধ্যে ২৩৯৬টি ফাঁকা রয়েছে।

হাসপাতালের পরিস্থিতি

উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬৯টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৩০টি ফাঁকা রয়েছে। হাসপাতালটিতে ২৬টি আইসিইউর মধ্যে ৪টি ফাঁকা আছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে ৭০ জন অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে। হাসপাতালটির ১০টি আইসিইউ শয্যার সবগুলোতে রোগী ভর্তি রয়েছে।

মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৭৪টি সাধারণ বেডের মধ্যে ১৩৪টি খালি আছে। তবে হাসপাতালটিতে ১৬টি আইসিইউ শয্যার একটিও ফাঁকা নেই।

ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৯০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৩৯টি ফাঁকা আছে। ৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে একটি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ণ ইউনিটে ৭০৫ সাধারণ শয্যার মধ্যে এখন ১১৮টি ফাঁকা আছে। তবে এখানে ২০টি আইসিইউ শয্যার একটিও ফাঁকা নেই।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৬০টি খালি আছে। তবে হাসপাতালটিতে ২৪টি আইসিইউ শয্যার কোনটিই ফাঁকা নেই।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬৩টি সাধারণ শয্যার ৮৪টি খালি আছে। তবে এখানে ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও ফাঁকা নেই।

রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৪৭০টি সাধারণ শয্যার ১৮৬টি ফাঁকা আছে। হাসপাতালটিতে ১৫টি আইসিইউ শয্যার মাত্র দুইটি ফাঁকা আছে।

মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল (মহাখালী) ৫০ সাধারণ শয্যার মধ্যে ৪৭টি খালি আছে। তবে এখানে কোন আইসিইউ শয্যা নেই।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ১৯১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৩৭টি ফাঁকা আছে। হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার ২টি ফাঁকা আছে।

শ্যামলী টিবি হাসপাতাল ১৮৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১৫৭টি ফাঁকা আছে। এখানে আজ পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ৮টি আইসিইউ শয্যা উন্নতি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি ফাঁকা আছে।

ন্যাশলাল ইনস্টিটিউট অব কিডনী ডিজিনেস এন্ড ইউরোলজীতে ১৫ শয্যার ১৩টি ফাঁকা আছে। তবে এখানে কোন আইসিইউ বেড নেই। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে কোন আইসিইউ বেড নেই। তবে এখানে ৩৮ সাধারণ শয্যার ১২টি ফাঁকা আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২৩০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৮৩টি ফাঁকা আছে। তবে বিএসএমএমইউতে ২০টি আইসিইউ শয্যার কোনটিই ফাঁকা নেই।

রাজধানীর সব সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলেও এখনো প্রভাব পড়েনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে। এখানে ৫০০টি সাধারণ শয্যার ৪৭৮টিই ফাঁকা আছে। অন্যদিকে ২১২টি আইসিইউ শয্যার ৮৮টিই খালি রয়েছে।

পাঠকের মতামত: