কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

২০৫০ নাগাদ সাড়ে ৬ কোটি মানুষ অভিবাসী হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের এক কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়তে বাধ্য হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই সংখ্যা তিনগুণের বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

গত শুক্রবার প্রকাশিত অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনাল ও ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং খরাপ্রবণ এলাকায় শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলের প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো আকস্মিক দুর্যোগে যারা বাস্তুচ্যুত হবেন, তাদের এই প্রক্ষেপণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর সে কারণেই এটা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম বলে মনে করছেন অ্যাকশন এইডের গ্লোবাল লিড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ হারজিৎ সিং।

হারজিৎ বলেন, অনেকে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে নিজ নিজ দেশের শহরগুলোর দিকে যাবেন। তাদের অধিকাংশের ঠাঁই হবে বস্তিতে। সেখানে সীমিত নাগরিকসেবা পাওয়ার পাশাপাশি রিকশা চালানো, নির্মাণ শ্রুমিক বা পোশাক কারখানায় কাজ করার মতো কোনো কাজ করতে হবে তাদের। বিশ্বনেতারা এখনো এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে এবং বিপদের মাত্রা বুঝতে পারছেন না।

উচ্চহারে কার্বন নিঃসরণকারী ধনী দেশগুলোর প্রতি দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান হারজিৎ। সেইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তহবিল জোগানোরও আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্য অর্জন করা গেলে ২০৫০ সাল নাগাদ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও নেপালে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা অর্ধেক কমে যেতে পারে।

নতুন প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে, সাড়ে চার কোটির বেশি। তবে বাংলাদেশেই অভিবাসন সবচেয়ে বেশি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে, বর্তমানের তুলনায় তা সাতগুণ হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তথ্য-বক্তব্যও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কাছের একটি দ্বীপের বাসিন্দা কবিতা মাইতিকে পাঁচবার বসতি বদলাতে হয়েছে সাগরে ঘর ভেসে যাওয়ার কারণে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আরও খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে অভিবাসী হতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে এখনই পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ ও কাজ দিয়ে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার এবং শহরের অভিবাসী শ্রমিকদের মান্নোয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। জলবায়ু অভিবাসনের লাগাম টানতে কৃষির উন্নয়নে নজর দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়ার পরিচালক সঞ্জয় ভাষিত বলেন, জলবায়ু অভিবাসন মোকাবিলার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিষয়গুলোও সামাল দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই এক্ষেত্রে সহায়ক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগ দিতে হবে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সুরক্ষায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

পাঠকের মতামত: