কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর’ ২০

উখিয়ার চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার ঘটনার এক বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক:: 

উখিয়া রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বৌদ্ধ সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা বড়–য়াপাড়ায় সংঘঠিত লোমহর্ষক নৃশংস হত্যাকান্ড হয় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে।
এসময় খুন হয় এক পরিবারের ৪ জন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের এক বছর অতিবাহিত হলেও দায়েরকৃত হত্যা মামলার কোন আসামী সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আদালতে দেওয়া হয়নি চার্জশীট। এনিয়ে স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এ গ্রামের অনেকেই বলছেন যেখানে ফোর মার্ডার ঘটনার কুল কিনারা হয়নি, সেখানে জননিরাপত্তা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপালন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ওই দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিল প্রবাসী সৌরভ বড়ুয়া প্রকাশ রোকেন বড়ুয়ার মা সখী বালা বড়ুয়া (৬৫), রোকেন বড়ুয়ার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), রোকেন বড়ুয়া ও মিলা বড়ুয়ার শিশু পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) এবং রোকেন বড়ুয়ার ভাতিজি ও শিপু বড়ুয়ার সন্তান সনি বড়ুয়া (৬)। এ ৪জনকে জবাই করে কে বা কারা রাত্রে নির্মমভাবে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও বাদীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা এখনো পর্যন্ত ঘটনার ন্যুনতম রহস্য উৎঘাটন করতে পারেনি।
এঘটনা নিয়ে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে করা হয়েছে। উক্ত মামলার এ পর্যন্ত ৪ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তৎমধ্যে প্রথম ধাপে তদন্তকারী কমর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি তদন্ত করেছেন, উখিয়া
থানার এসআই মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, দ্বিতীয় ধাপে উখিয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার দায়িত্বপালন করার পর ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর মামলাটি কক্সবাজার জেলা
পুলিশ থেকে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)-কে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই থেকে প্রথমে ইন্সপেক্টর পুলক বড়ুয়াকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত জুন মাসে আবারও তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন পূর্বক ইন্সপেক্টর কৈশনু মার্মাকে চতূর্থ ধাপে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত মামলাটির চার জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও, দীর্ঘ এক বছরেও আসামী সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলায় রোকেন বড়ুয়ার ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া, রোকেন বড়ুয়ার ভায়রা ভাই অসীম বড়ুয়া এবং তাদের নিকটাত্মীয় উজ্জ্বল বড়ুয়াকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হলেও তার তিনজনই ইতিমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটির চার্জশীট না হওয়ায় মামলাটি বিচারের আওতায় আসছে না। চার্জশীট দাখিলের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বার
বার আদালতে সময়ের আবেদন করে কালক্ষেপন করছে।
উখিয়ার এই ফোর মার্ডার মামলা সম্পর্কে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের ট্রাস্টি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ এক বছরেও এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামীকে খুঁজে বের করতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে আরো বেশি তৎপর হওয়া উচিত বলে দাবী করেন।
উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রথম দিকে এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে কক্সবাজার জেলা পুলিশ বেশ তৎপর ছিলো। তারা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। মামলাটির তদন্তভার পিবিআই কে দেওয়ার পরও তদন্তে গতি ছিলো। এখন তদন্ত কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি মামলাটি সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের মতো চার্জশীট প্রদানে দীর্ঘ সূত্রতা পরিহার করে প্রকৃত খুনীদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানান।
এ মামলার তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে জানার জন্য বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পিআইবি’র ইন্সপেক্টর কৈশনু মার্মার সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে যে সমস্ত ক্রিমিনালদের ডিএনএ পাওয়া গেছে তার ফ্রিজআপ করা আছে। উক্ত ডিএনএ গুলো পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে টেষ্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মামলার অনেক খানি অগ্রগতি হয়েছে। অচিরেই চার্জশীট দাখিল করা সম্ভব হবে।

পাঠকের মতামত: