কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে ‘রোগী না থাকায়’ বন্ধ করোনা হাসপাতাল

করোনা মহামারীতে যখন অনেক চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ করে বাসায় অবস্থান করেন তখন করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ান ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তার নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল মাত্র ২১ দিনে করোনা রোগীদের জন্য তৈরি করেন ৬০ শয্যার চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল। এটি হয়ে উঠে অসহায়দের ভরসাস্থল। ১৩০ দিনের করোনাযুদ্ধে এক হাজার ৬০০ রোগীকে সুস্থ করে তোলেন তারা। রোববার চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সমকালকে বলেন, ‘করোনা রোগী না থাকায় রোববার দুপুর থেকে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আমরা গত সাড়ে চার মাসে এক হাজার ৬০০ জন করোনা রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করেছি। এর মধ্যে শুধুমাত্র চারজন করোনা রোগী মারা গেছেন। ভবিষ্যতে আমরা আরো বড় পরিসরে মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য আসবো। সকলকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া জানান, করোনার আঘাতে যখন পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে যায়, তখনই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস করেছিলাম। এক লাখ মানুষ। একশ’ টাকা। এক কোটি টাকা। একটি ফিল্ড হাসপাতাল। সেই অলিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম সহযাত্রী ছিল সাধারণ মানুষ। অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। আমরা একটি টিম তৈরি করে কাজ করেছি।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ছলিমপুরে নাভানা গ্রুপের ছয় হাজার আটশ বর্গফুটের একটি ভবনে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হয়। গত ১ এপ্রিল ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ উদ্যোক্তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম যেদিন স্পটটি পরিদর্শনে যান ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সেই দিনও তার সঙ্গে ছিলেন আবু মোহাম্মদ আরিফ। সেদিন থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঙ্গে তার নিজস্ব গাড়িতে করে সকালে ফিল্ড হাসপাতালে যেতেন, সারাদিন কাজ করে রাতে তার গাড়িতে করেই বাসায় ফিরতেন আরিফ। টানা ২০ দিন কঠোর পরিশ্রম করে তারা হাসপাতালটি প্রস্তুত করেন। ২১ এপ্রিল থেকে ৬০ শয্যার হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। এর মধ্যে ৫০টি সাধারণ শয্যা, ৫টি হাই ফ্লো ক্যানেলা ও ৩টি ভেন্টিলেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ জন ডাক্তার স্বাস্থ্য সেবা দেন।

ফিল্ড হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক আবু মোহাম্মদ আরিফ জানান, আমি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফিল্ড হাসপাতালে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা করে যে খরচ হতো তা সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে গেছি আমরা। আমরা যখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি, তখন একদিন একজন করোনায় আক্রান্ত রোগীকে গোসল করানো হচ্ছে- এ রকম একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করি। তখন অনেক মানুষ বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি করোনা রোগী। তারপর ধীরে ধীরে করোনার ভয় ও ভীতি কাটাতে অনেকটা সহযোগিতা করেছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল। এই হাসপাতাল নিয়ে এখন চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এটি কিভাবে আরো গণমুখী ও স্থায়ী করা যায় সেটাই এখন আমাদের ক্যাপ্টেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া দাদা ভাবছেন। সুত্র-সমকাল

পাঠকের মতামত: