কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ভাসানচর ভালো লেগেছে রোহিঙ্গা নেতাদের’

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে যে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি দেখে ভালো লেগেছে কক্সবাজারের শরাণার্থী শিবির থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দলের অনেকের। দলের অধিকাংশ সদস্য ভাসানচরের আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো দেখে সন্তুষ্ট। তবে সেখান থেকে ফিরে পুরো অভিমত প্রকাশ করতে চায় রোহিঙ্গা নেতারা।

রোববার সন্ধ্যায় ভাসানচর থেকে মুঠোফোনে রোহিঙ্গা নেতা মোস্তফা জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গাড়িতে করে ভাসানচর ঘুরে দেখেন তিনিসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা। সাগরের বুকে জেগে উঠা এই চরে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো তাদের ভালো লেগেছে।

তিনি বলেন, শুরুতে তাদের ভাসানচরের খাদ্য গুদাম দেখানো হয়। তবে সেটি খালি ছিল। এর পর আশ্রয় সেন্টার, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থানসহ মাছ চাষের পুকুর পরিদর্শন করেন তারা। এ ছাড়া সেখানে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বাগানও পরিদর্শন করেন। পাশপাশি সাগরের তীরে কেওড়া বাগান দেখে অনেকে মুগদ্ধ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত সরকারের গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্পগুলো খুুবই চমৎকার লেগেছে। কাল (সোমবার) পুরো প্রকল্পগুলো দেখে বিস্তারিত বলা যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাসানচর দেখতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘চার ঘন্টা ভাসানচর ঘুরে দেখেছি আমরা। যা দেখেছি সবই ভালো লেগেছে। এখানে আমাদের খুব ভালো আপ্যায়ন হয়েছে। আগামীকালও ভাসানচর ঘুরে দেখব আমরা।’

এ বিষয়ে হাতিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) গোলাম ফারুক বলেন, ‘রোববার দুপুরে ভাসানচর ঘুরে দেখেন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল। এ সময় তাদের আনন্দিত দেখা গেছে। এ ছাড়া ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও ঘুরতে আসা রোহিঙ্গারা দেখা করেন এবং কথা বলেন। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সেটি জানি না।’

শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল ভাসানচরে পৌঁছেছে জানিয়ে সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক বলেন, ‘চল্লিশ জনের রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার ভোরে ভাসানচর দেখতে রওনা হয়েছিল। তারা শনিবার দুপুরে চট্রগ্রামে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে জাহাজে করে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে পৌঁছায়।’

এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে গেছেন। সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে ভাসানচর যেতে রাজি হবেন শরণার্থীরা। তবে এই দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের কোনো সংস্থার প্রতিনিধি বা গণমাধ্যমর্কীরা থাকছেন না। তবে আগে থেকে ভাসানচরে আরআরআরসি কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছেন।

জাতিসংঘসহ শরণার্থীদের মানবিক সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতামত ছাড়া কমপক্ষে এক লাখ শরণার্থীকে ওই দ্বীপে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে চলমান সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।

পাঠকের মতামত: