কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেনুকে ছেলেধরা বলে অপবাদ দেয় গৃহকর্মী রিয়া

রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু হত্যা মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আব্দুল হক আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়েছে, রেনুকে ছেলেধরা বলে অপবাদ দেন এক নারী অভিভাবক রিয়া। তিনি পেশায় গৃহকর্মী। এরপরই আসামিরা মিলে তাকে গণপিটুনিতে হত্যা করে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন :ইব্রাহিম ওরফে হূদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, শাহিন, বাচ্চু মিয়া, বাপ্পি, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, রাজু ও মহিন উদ্দিন। এদের মধ্যে মহিন উদ্দিন পলাতক। জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে।

Ad by Valueimpression
আলিফ, মারুফ, সুমন ও আকলিমা—এই চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা তাদের অব্যাহতির আবেদন করেছেন। আসামিদের মধ্যে ওয়াসিম, হূদয় ও গৃহকর্মী রিয়া বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে রিয়া বেগম, বাচ্চু মিয়া, শাহীন, মুরাদ ও বাপ্পি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

চার্জশিটে যা বলা হয়েছে :

নিহত তাসলিমা বেগম রেনু ১১ বছরের তাসিন আল মাহির ও চার বছর বয়সের মেয়ে তাসমিন তুবার জননী। তুবাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে ঘুরছিলেন। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকাল ৯টার দিকে তাসলিমা বেগম রেনু উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেকে ভর্তি করানোর জন্য খোঁজ-খবর নিতে যান। ঐ সময় সারা দেশে পদ্মা সেতু নির্মাণে মাথা লাগবে—এই গুজব চলছিল। হঠাত্ স্কুলের নিচতলায় নারী অভিভাবকেরা রেনুকে ঘিরে ধরে ছেলেধরা বলে চিত্কার করতে থাকেন। পরে স্কুলের একজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারী রেনুকে প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগমের কক্ষে নিয়ে যান।

ঐ সময় রিয়া নামে এক নারী অভিভাবক চিত্কার করে বলেন, ‘আপা, ঐ মহিলা ছেলেধরা। ওরে আমাদের কাছে দিয়া দ্যান।’ পরে তারা রেনু বেগমকে সেখানেই মারতে উদ্যত হন। প্রধান শিক্ষিকা রিয়াকে দোতলার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এই খবর পেয়ে রিয়াসহ অনেকেই বিষয়টি মোবাইল ফোনে কয়েক জনকে খবর দেন। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্কুলের ভেতরে শত শত মানুষ ঢুকতে থাকে। ঐ সময় অর্ধশত মানুষ দোতলার ঐ কক্ষের দরজার তালা ভেঙে ফেলে। কক্ষে ঢুকে রিয়াসহ অন্য নারী অভিভাবকেরা রেনুকে টেনেহিঁচড়ে দোতলার কক্ষ থেকে নিচে নামাতে থাকেন।

চার্জশিটে বলা হয়, তারা স্কুলের ভেতরে পাকা মেঝেতে ফেলে রেনুকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। পরে রেনুকে তুলে একটু সামনে এগিয়ে গেলে সেখানে পুরুষেরা লাঠি নিয়ে হামলে পড়েন। তখন রেনু বেগম চিত্কার করে বলছিলেন, ‘আমারে মাইরেন না। আমি ছেলেধরা না।’ এ কথা শুনে হূদয় নামে একজন লোহার রড দিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। কেউ কেউ লাথি মারতে থাকে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধরে অনবরত মারতে থাকার পর ঐ নারী নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

প্রসঙ্গত, রিয়া বাড্ডায় থাকেন এবং ঐ এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। তার স্বামী সাগর হোসেন রবিন পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। জুনায়েদ নামে রিয়ার ছয় বছরের সন্তান ঐ স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

পাঠকের মতামত: