কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মানব পাচারের কনসালটেন্ট তিনি!

ভালো বেতনে কোম্পানির চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চট্টগ্রামের শত শত যুবককে কম্বোডিয়ায় নিয়ে যায় আর এ কে কনসালটেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার পরিচালক ইফতেখার আহমদ খান প্রকাশ রনি। কিন্তু সেখানে নিয়ে তাদের উপর চালানো হয় ভয়াবহ নির্যাতন। যা জানিয়ে পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা।
তবে শেষ মেষ রক্ষা হয়নি মানব পাচারের এই কনসালটেন্টের। ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এমন দুই ব্যক্তির পরিবারের স্বজনদের অভিযোগ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার লেইন থেকে ইফতেখার আহমদ খান রনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শরীফ গতকাল এ তথ্য জানান। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে মানব পাচার চক্রটির প্রতারণার শিকার ১০/১৫ জন ভুক্তভোগী সিআইডি কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন।

পরে ভুক্তভোগী পরিবারের দুই স্বজন নগরীর খুলশী থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ছায়া তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে আটক করা হয়।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরো জানান, আর এ কে কনসালটেন্সি নামে ওই প্রতিষ্ঠান কম্বোডিয়াতে শতভাগ ভিসার নিশ্চয়তা ও ৫০/৬০ হাজার টাকা বেতনসহ নানা সুবিধা সম্বলিত চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর জিম্মি করে প্রবাসীদের কাছ থেকে আরেক দফা টাকা নেয়।
বিজ্ঞাপনে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পর কাজ দেয়ার কথা বললেও তারা কোনো কাজ দিতে পারেনি। এ ছাড়া কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিজনেস ভিসায়। মূলতঃ ওই দেশে কোনো ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নেই। এতে প্রতারণার শিকার হন বিদেশগামীরা। মুহাম্মদ শরীফ জানান, চক্রটি ভুক্তভোগী লোকজনকে কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন ঘোরাঘুরির পর একপর্যায়ে তাদের ইট ভাঙা ও বালু টানার কাজ দেয়। এই কাজ না করে শ্রমিকরা দেশে ফিরতে চাইলে তাদের আটকে রাখে। পরে মামলা করতে পারবে না মর্মে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের দেশে ফেরার সুযোগ দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রনি অন্তত ১০০ জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা।
খুলশী থানা ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, খুলশী থানায় ওমর ফারুক ও মো. রফিক নামে ভুক্তভোগী পরিবারের দুই সদস্য পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলা নং- ৯ ও ১০, তারিখ-১০/০৯/২০২০ ইং। মামলায় রনি ও তার স্ত্রী জোবাইদা গোলশান আরাসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওমর ফারুকের কাছ থেকে ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং রফিকের কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্রেপ্তার ইফতেখার আহমদ খান রনি (৪০)। তিনি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মৃত সালেহ আহমদ খানের ছেলে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার লেইনে থাকতেন তিনি। খুলশী থানা এলাকায় আর এ কে কনসালটেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্ট ও পরিচালক তিনি। মূলত এ প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মানব পাচার করতেন তারা।

ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা জানান, রনি প্রথমে চাকরি দেয়ার নাম করে কম্বোডিয়ায় লোক পাঠায়। চাকরিপ্রার্থী লোক সেখানে পৌঁছার পর কেড়ে নেয়া হয় পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র। এরপর তাদের জিম্মি করে দেশে খবর পাঠানো হয় টাকা দেয়ার জন্য। দেশে থাকা পরিবার টাকা পরিশোধ করলে সাদা স্ট্যামেপ সই নিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে। মানবজমিন

পাঠকের মতামত: