কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বদলে যাচ্ছে কক্সবাজারের রূপ, ঘুরবে অর্থনীতির চাকা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সাগরের প্রচণ্ড ঢেউ ও পানির স্রোতে সৈকতের বালিয়াড়ি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত রয়েছে। এতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তাই ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও টেকসই আধুনিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্পটির ডিজাইন প্ল্যানিং করে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠাতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরপর এটি একনেকে অনুমোদন হলে কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

চলতি বছরের মার্চে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও টেকসই আধুনিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প’ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট ও কবিতা চত্বর হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ঝাউবাগান ভাঙনে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ অংশে জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত থাকলেও শেষ রক্ষা করা যাচ্ছে না কিছুতেই।

সাগরের পানির স্রোতে ভেঙে পড়া ঝাউবাগান উপকূল রক্ষার শেষ রক্ষাকবচ। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে। ফলে এর খেতাবটিও মুছে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

কক্সবাজারের ডিসি ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে এডিসি (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজার শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী একাধিকবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শনের পর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, টেকসই পরিবেশবান্ধব বাঁধ নির্মাণ না করলে পর্যটন হোটেল-মোটেল জোন, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমদ জানান, আধুনিক নির্মাণশৈলী দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে সুরক্ষিত করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক বছরের ১২ মাসেই সমান তালে আসতে থাকবে। সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউসকে পর্যটন মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং মাঝে মাঝে বিনোদনের ব্যবস্থা ইত্যাদি সুযোগ নিশ্চিত করা হলে আরো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। ফলে কক্সবাজারের চিত্র যেমন পাল্টে যাবে, তেমনি নতুন নতুন দেশি-বিদেশি পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়বে।

কক্সবাজারের ডিসি মো. কামাল হোসেন বলেন, এই একটি প্রকল্পই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বাড়াতে পারে। দিনের বেলা যেমন পর্যটকে ভরপুর থাকবে রাতের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে আগ্রহ আরো বাড়বে। পৃথিবীর উন্নত দেশের পর্যটকরা কক্সবাজারে আসার আগ্রহ দেখাবে। কারণ সমুদ্র সৈকতের ওপরের ঝাউবাগান ঘেঁষে হবে ওয়াকওয়ে আর মাঝে মাঝে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি দিয়ে সাগরে নেমে যেতে পারবে পর্যটকরা। শুধু তাই নয়, কক্সবাজার পর্যটন খাত হবে দেশের সবচেয়ে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি বদলে যাবে কক্সবাজার, বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চাকা।

পাঠকের মতামত: